চালক বললেন, ‘কুয়াশায় দেখতে পাইনি’
গ্রেপ্তার বাসচালক তসিকুল ইসলাম | ছবি- ঢাকা পোস্ট
বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহতের ঘটনায় ‘কুয়াশার’ ওপর দায় চাপালেন আজমেরী পরিবহনের চালক তসিকুল ইসলাম (২৮)। তার দাবি, দুর্ঘটনাটি মোটরসাইকেলের চালকের কারণেই হয়েছে। হঠাৎ বাসের সামনে চলে আসায় ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে যান তারা।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী আকাশ ইকবাল (৩৩) ও মায়া হাজারিকা (২৫) নিহত হন। একই দিন মধ্যরাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গাজীপুর থেকে চালক তসিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। বাসের হেলপার ও কন্ডাক্টর এখনও পলাতক রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
জিজ্ঞাসাবাদে চালক দাবি করেন, মোটরসাইকেলটি হঠাৎ তার সামনে চলে আসে। কুয়াশার কারণে তিনি মোটরসাইকেলটি দেখতে পাননি। এ কারণে ধাক্কা লাগে
অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর
মঙ্গলবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তার চালকের দাবি, মোটরসাইকেল চালকের কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি হঠাৎ বাসের সামনে চলে আসেন। কুয়াশার কারণে দেখতে না পেয়ে ধাক্কা লাগে মোটরসাইকেলে।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তার অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য, প্রথাগত ও প্রযুক্তিগত তদন্তের ভিত্তিতে চালক তসিকুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে চালক দাবি করেন, মোটরসাইকেলটি হঠাৎ তার সামনে চলে আসে। কুয়াশার কারণে তিনি মোটরসাইকেলটি দেখতে পাননি। এ কারণে ধাক্কা লাগে।
চালক বারবার দাবি করেন, ‘ওই ঘটনায় মোটরসাইকেল চালকেরই দায় ছিল।’ তবে দুর্ঘটনায় কার কত দায় ছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে— বলেন সিআইডি কর্মকর্তা মুক্তা ধর। বাসের হেলপার ও কন্ডাক্টর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা এখনও পলাতক আছেন। তাদের ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক জানান, ওই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে, পাশাপাশি সিআইডিও ছায়া তদন্ত করছে। সিআইডির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চালক দাবি করেছে, তিনি নির্দোষ। সঠিকভাবেই তিনি বাস চালাচ্ছিলেন। এটা নাকি সম্পূর্ণ মোটরসাইকেল চালকের ফল্ট (দোষ)।
শেখ ওমর বলেন, ‘চালক চাপা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে বিস্তারিত উঠে আসবে।’
সিআইডি কার্যালয়ে ছবি তোলার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন চালক তসিকুল। তার লাইসেন্স আছে কি-না, জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘আমার হালকা যান চালানোর লাইসেন্স আছে। ১০ বছর ধরে এ লাইসেন্স দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছি।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকচালকদের পেশাদার ও ভারি যান চালানোর লাইসেন্স নিতে হয়। চালক তসিকুল ইসলামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শেরপুর গ্রামে।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী আকাশ ইকবাল (৩৩) ও মায়া হাজারিকা (২৫) নিহত হন। বিমানবন্দর এলাকার পদ্মা ওয়েল গেটের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তাদের বাসা দক্ষিণখানের মোল্লারটেক এলাকায়। এ দম্পতির আরফা আনজুম নামের চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
দুর্ঘটনার বিষয়ে বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বি এম ফরমান আলী জানান, প্রথমে যাত্রীবাহী বাস মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে স্বামী-স্ত্রী দুজনই ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। পরে বাসটি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা।
থানার এসআই মশিউল আলম বলেন, ‘নিহত দুজনেরই মাথায় হেলমেট ছিল। তারা নামমাত্র হেলমেট পরেছিল। নিম্নমানের হেলমেটে তাদের জীবন রক্ষা হয়নি।’
ফরিদপুর সদর উপজেলার ধুলদি গ্রামের জাফর শেখের ছেলে আকাশ। একই এলাকাতে বাড়ি স্ত্রী মায়ারও। স্ত্রী মায়া ও চার বছরের একমাত্র মেয়ে আরফা আনজুমকে নিয়ে দক্ষিণখান মোল্লারটেক তেতুলতলা উদয়ন স্কুলের পাশের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
আকাশ উত্তরায় একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মায়া বিমানবন্দরে একটি রেস্টুরেন্টে কর্মরত ছিলেন।
এআর/এমএসি/এমএআর