সাড়ে ১৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির পরিকল্পনা ছিল চক্রটির
ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত চক্রের আটক সদস্যরা
রাজধানীর ফকিরাপুল গরম পানির গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত একটি চক্রের চার সদস্যকে আন্তর্জাতিক কলিং কার্ডসহ আটক করা হয়েছে। অভিযানটি পরিচালনা করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০ ও বিটিআরসির সমন্বয়ে গঠিত একটি দল।
র্যাব জানায়, চক্রটি সদস্যরা গত সাত থেকে আট বছর ধরে অবৈধভাবে ভিওআইপি কলের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। সর্বশেষ চক্রটি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার বড় পরিকল্পনা নিয়েছিল। চক্রটির প্রিন্টিং প্রেসে যে বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক কলিং কার্ড পাওয়া গেছে, সেগুলো ব্যবহার হলে সরকার প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারাতো।
বিজ্ঞাপন
আটকরা হলেন, মো. আমির হামজা (৩৩), মো. আলমগীর হোসেন (৪৫), মো. শামীম মিয়া (২৯) ও মো. সাগর মিয়া (২৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত দুটি সিপিইউ, দুটি মনিটর, একটি মাউস, একটি কি-বোর্ড দুটি প্রিন্টার, দুটি জেনার, একটি পেপার কাটার মেশিন, একটি ডিজিটাল ওজন মেশিন ও চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজুর রহমান এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন।
বিজ্ঞাপন
মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় র্যাব-১০ ও বিটিআরসির সমন্বয়ে যৌথ অভিযানে রাজধানীর ফকিরাপুল গরম পানির গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চক্রের চার সদস্যকে আন্তর্জাতিক কলিং কার্ডসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে লাইসেন্স নেওয়া ছাড়াই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। তাদের প্রিন্টিং প্রেসে যে বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক কলিং কার্ড পাওয়া গেছে, তা যদি ব্যবহার হতো, তবে বাংলাদেশ সরকার আনুমানিক ১৯ কোটি ৪৭ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫০ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো।
তিনি বলেন, এই অসাধু ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা প্রচলিত সফটওয়্যারভিত্তিক সুইচের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল রাউট করে ও স্থাপনা পরিচালনা করার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করতেন। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব ও চার্জ ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে চক্রটি যান্ত্রিক, ভার্চুয়াল এবং সফটওয়্যারভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা প্রদান করত।
আটকরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত ডায়ালার অ্যাপ কলের বাংলাদেশে অবৈধভাবে রাউট করত ও ওই অ্যাপে রিচার্জের জন্য বিভিন্ন অংকের কলিং কার্ড বিক্রি করতেন। এছাড়া তারা অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা প্রদান করে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতেন।
তিনি আরও বলেন, আটকরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘ সাত থেকে আট বছর ধরে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভিওআইপি ও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। প্রিন্টিং প্রেসে ভয়েস পাকিস্তান, পাকিস্তান ভয়েস, কাতার এক্সপ্রেস, এশিয়ান টেলিকম, এনএস এক্সপ্রেস, প্রবাসী কার্ড, স্বপন টেল, সুপার কার্ড ও কাতার টুসহ মোট ১০৭টি কলিং কার্ড ক্লায়েন্টের দেড় লাখের বেশি কুপন পাওয়া গেছে।
চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে আসছিল। তারা প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার মতো রাজস্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। তবে এর আগেই আমরা চক্রটির সদস্যদের আটক করি। তারা হুন্ডি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এসব ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
একই সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির এনফোর্সমেন্ট এন্ড ইনস্পেকশন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর এস এম গোলাম সারওয়ার বলেন, অবৈধ ভিওআইপির চক্রটি বিটিআরসির চোখ ফাঁকি দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ টেলিযোগাযোগ সেবা দিয়ে যাচ্ছিল। অনেক সময় বিটিআরসির গ্যাপের কারণেও এ অবৈধ ভিওআইপিরা সাময়িক ব্যবসা করে। তবে একটা সময়ে তারা ধরা পড়ে। বিটিআরসির টেকনোলজি আরও আপডেট ও লজিক পরিবর্তন করতে হবে। বিটিআরসির ব্যর্থতা এবং এখানে আমাদের কোনো কর্মকর্তা জড়িত কিনা সেই বিষয়টি সামনে আসছে।
তিনি বলেন, অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে র্যাবের সঙ্গে বিটিআরসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। সেগুলো আপনারা দেখতে পারছেন। কিন্তু এর বাইরেও আমরা ধারাবাহিকভাবে অনেক কাজ করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতি ১২ ঘণ্টা পর বিটিআরসির সেটআপ লজিক প্রয়োগ করি। এর মধ্যে যেসব সিম সন্দেহজনক মনে হয়, সেগুলো ব্লক করে দেওয়া হয়। অবৈধ ব্যবসায়ীদের সিম ব্লক করার পরে তারা নতুন নতুন সিমের স্টক আনেন। এভাবে তারা তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। অবৈধ এসব ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে থেকে টেকনিক্যাল জ্ঞান অর্জন করেন। তাদের মাস্টারমাইন্ড থাকে এবং তারা টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়। তারা সব সময় আপডেট থাকে। বিটিআরসি মডিউলকে কীভাবে ফাঁকি দেওয়া যায় তা এনালাইসিস করে তা ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করে মাস্টারমাইন্ডরা।
এমএসি/আরএইচ