চট্টগ্রামে পিডিবি অফিসে এসে প্রকৌশলীকে চড়-থাপ্পড়
চট্টগ্রাম নগরীর নিউমুরিংয়ের পিডিবি’র বিক্রয় ও বিতরণ কার্যালয়ের অফিসে এসে উপ-সহকারী প্রকৌশলী শান্তনু দাশকে মারধর করে লাঞ্ছিত করেছেন বন্দর ডক শ্রমিক লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সেলিম নাজমি।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন প্রকৌশলী শান্তনু দাশ।
বিজ্ঞাপন
জিডি সূত্রে জানা গেছে, ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিউমুরিংয়ের পিডিবি’র বিক্রয় ও বিতরণ কার্যালয়ে প্রবেশ করে হঠাৎ প্রকৌশলীকে ধাক্কা দিয়ে চড়-থাপ্পড় দেন সেলিম নাজমি ও তার ছেলে সাজিন সাজিদ। চড়-থাপ্পড়ের দৃশ্য ধরা পড়েছে নিউমুরিংয়ের পিডিবি কার্যালয় প্রাঙ্গণের সিসিটিভি ফুটেজে।
ফুটেজে দেখা গেছে, একটি গাড়িতে সেলিম তার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিউমুরিংয়ের পিডিবি’র বিক্রয় ও বিতরণ কার্যালয়ের অফিসের নিচতলায় উপস্থিত হন। এসময় উপ-সহকারী প্রকৌশলী শান্তনু দাশ অফিসে প্রবেশ করার সময় পথ আগলে ধরেন তারা। শান্তনু দাশের সাথে কথা বলে একপর্যায়ে সেলিম ও তার ছেলে তাকে ধাক্কা দেন। এছাড়া এ সময় শান্তনুকে সেলিম ও তার ছেলে মিলে চড়-থাপ্পড় মারেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, দক্ষিণ হালিশহর এলাকায় সেলিমের সেমিপাকা ভাড়া বাসায় মিটার টেম্পারিংয়ের দায়ে পিডিবির পক্ষ থেকে জরিমানা করা হয়েছিল। এরপর অফিসে গিয়ে তারা এ ঘটনা ঘটান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের শিকার উপ-সহকারী প্রকৌশলী শান্তনু দাশ শুক্রবার (১ অক্টোবর) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘২৩ সেপ্টেম্বর সেলিমের বাসায় বিদ্যুৎ মিটার চেকিং করার জন্য উপস্থিত হয়ে দেখি তার ভাড়া বাসায় তিনটি পোস্টপেইড মিটার। এগুলোতে মিটার টেম্পারিং করে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছিলেন সেলিম। তাৎক্ষণিক আমি বিষয়টি অবস্থানরত ইনচার্জকে জানাই। তিনিও ঘটনার সত্যতা পান। এরপর আমরা বিদ্যুৎমিটারের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেই। একইসঙ্গে তাদেরকে বৈধ উপায়ে মিটার স্থাপন করার জন্য অনুরোধ করি।
তিনি আরও বলেন, মিটার বিচ্ছিন্ন করার কারণে তারা মনক্ষুণ্ন হন। ২৬ সেপ্টেম্বর সেলিম ও তার সন্তান বিদ্যুৎ অফিসে এসে ২৩ তারিখের ঘটনা (কেন ঘটিয়েছি) আমার কাছে জানতে চান। এক পর্যায়ে তারা আমার গেঞ্জির কলার ধরে টেনে-হিঁচড়ে চড়-থাপ্পড় মারেন। এছাড়া সেলিমের ছেলে সাজিদ আমাকে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং কিল-ঘুষি দেন। সেলিম ও তার ছেলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শান্তনু দাশ।
তিনি বলেন, আমরা তিনটি মিটারে টেম্পারিং করার প্রমাণ পাই। সেগুলো খুলে নিয়ে আমরা তিন মাসে ৫ হাজার ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ চুরির দায়ে সেলিম নাজমিকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করি। হাতেনাতে তাকে টেম্পারিং হয়েছে প্রমাণ দিলে তিনি আমাদের জরিমানা পরিশোধ করবেন বলেও জানান। অথচ তিন দিন পর এসে উল্টো আমাকে সবার সামনে চড়-থাপ্পড় দিয়ে মারমুখী আচরণ করেন।
শান্তনু দাশ বলেন, এ ঘটনায় ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।
ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনায় ইপিজেড থানায় জিডি হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।
এ ব্যাপারে জানতে সেলিম নাজমি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন সমঝোতা করার জন্য আমার কাছে এক লাখ টাকা চেয়েছিলেন। পিডিবি অফিসে যাওয়ার পর আমার স্ত্রী বিদ্যুৎ বিলের জরিমানা বিষয়ে কথা বললে প্রকৌশলী শান্তনু খারাপ আচরণ করেন।
সেলিম নাজমি প্রকৌশলীকে মারধর করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি । তবে তার ছেলে সাজিন সাজিদ চড়-থাপ্পড় দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
সাজিন বলেন, এ ঘটনায় প্রকৌশলীর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করায় তাকে (শান্তনুকে) ধাক্কা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মিটারটা পুরানো। আমাদের মিটারে সমস্যা ছিল। কিন্তু তারা বলছে আমরা চুরি করছি। আমরা মোটেও চুরি করিনি।
কেএম/এইচকে