‘বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা

বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকে সচল করার জন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (পবা)। একই সঙ্গে আরও ৬টি সুপারিশ জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর কলাবাগানে পবার মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি ও সুপারিশ জানানো হয়।

সুপারিশগুলো হচ্ছে- বস্তিতে করোনায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং এনজিও পরিচালিত স্কুলগুলো সরকারি উদ্যোগে খুলে দেওয়া; বস্তির স্কুলগুলোতে সরকারি উদ্যোগে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং সকল বেতন ফি মওকুফ করা; অভিভাবকদের সচেতনতার জন্য সমাবেশসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচী হাতে নেওয়া; বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে স্কুলে ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া; বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোকে বিশেষ সহযোগিতার আওতায় নিয়ে আসা ও করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য বিশেষ ভাতা চালু করা এবং বস্তিবাসী মানুষদের কাজে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, করোনার মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১১ মাস ধরে বন্ধ। এ সময়ে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত দেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও শিক্ষাপঞ্জি ওলটপালট গয়ে গেছে। সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে দুরশিক্ষণ ব্যবস্থা করা গেলেও বাস্তবে ৬৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই এতে অংশ নিতে পারেনি। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের এক সমীক্ষায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।

বক্তারা আরও বলেন, বস্তি এলাকায় যেসব বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল, তার অধিকাংশই করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে যাদের শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা রয়েছে, তারাও বঞ্চিত হবে। এর ফলে নগরের বস্তিতে বেড়ে যাচ্ছে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া, বাল্য বিবাহ, শিশুশ্রম। এমনকি তাদের মধ্যে মানসিক বিকারগ্রস্থতাও বেড়ে যাবে। ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ আর মাধ্যমিকে এ হার ছিল ৩৭.৬২। ২০২১ সালে ঝরে পড়ার এ হার আরও অনেক বাড়বে।

তারা আরও বলেন, ঝরে পড়ার পেছনে অন্যতম কারণ দারিদ্র্য ও বাল্যবিয়ে। বিশেষ করে শহরের বস্তিবাসী এবং চর ও হাওর অঞ্চলের শিশুরাই বেশি ঝরে পড়ে। করোনার কারণে এ পরিবারগুলোর দারিদ্র্য আগের চেয়ে বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো রকমে তিন বেলা খেতে পারলেও পুষ্টিমান রক্ষা করতে পারছেন না। যদি বস্তিবাসীদের মধ্য থেকে ১০ ভাগ শিক্ষার্থীও এ সময়ে ঝরে পড়ে, তবে তার পরিমাণও হবে প্রায় ৪ লাখ। আর এ সার্বিক পরিবর্তনের জন্য বস্তিবাসীর শিক্ষা জীবনকে রক্ষা করার চেষ্টা জরুরি।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান, কাপ-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান ইয়াত, বারসিকের সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা সুদিপ্তা কর্মকার, পবার সম্পাদক আতিক মোর্শেদ, পবার শাকিল রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের সভাপতি আবু সাদাত মো. সায়েম, বস্তিবাসী নেত্রী কুলসুম বেগম, হোসনে আরা বেগম রাফেজা, নুরুজ্জামান প্রমুখ।

এইচএন/এমএইচএস