সংসদে জাপা এমপি ফিরোজের বক্তব্যের প্রতিবাদে নির্মূল কমিটির নিন্দা
সংগৃহীত ছবি
সংসদ অধিবেশনে গত ২৪ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতি কদর্য ভাষায় বিষদগার ও নির্মূল কমিটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানোর প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটি বলছে, কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলাদেশে বাস করেও কারা, কী উদ্দেশ্যে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করেছেন তিনি যদি তা না জানেন সেটা চরম মূর্খতারই পরিচায়ক।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সহ-সভাপতি শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযোদ্ধা কলাম লেখক সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ যে কদর্য ভাষায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতি বিষদগার করেছেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। সংসদের ধারা বিবরণী থেকে এ ধরনের অসংসদীয়, কদর্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
‘নির্মূল’ শব্দকে নিয়ে তিনি ৭১-এর ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের ভাষায় বিদ্রূপ করে আমাদের প্রকারান্তরে হত্যাকারী বলেছেন। দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা এ নামটি নির্ধারণ করেছিলেন ৭১-এর গণহত্যাকারীদের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতির মূল উৎপাটনের জন্য। কাউকে কায়িকভাবে হত্যা করার জন্য নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয় পার্টি সংবিধান হত্যা করে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, জনতা হত্যা করে নয় বছরের স্বৈরশাসন অব্যাহত রেখেছিল, সে ইতিহাস জাতির অজানা নয়। ৭১-এর ঘাতকদের মন্ত্রী বানিয়ে অসাম্প্রদায়িক মানবিক সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ যুক্ত করে দেশ ও জাতিকে পাকিস্তানের মতো সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং অমুসলিম নাগরিকদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ও মর্যাদা হরণ করে জাতীয় পার্টি ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান যেভাবে লাঞ্ছিত করেছে, তা সবাই জানে। দেশ ও জাতিবিরোধী এ ঘৃণ্য অপরাধের দায় জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের আগ পর্যন্ত বহন করতে হবে।
‘মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে নির্মূল কমিটি যখন ৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য দেশে ও বিদেশে ৩০ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে, তখন থেকে বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থী গণহত্যাকারীদের দল এবং তাদের পুনর্বাসনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্মূল কমিটির প্রতি বিষদগার শুরু করেছে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ একই ভাষায় জাতীয় সংসদকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বেছে নিয়েছেন, যেখানে নির্মূল কমিটির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।
‘রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা গত ৩০ বছরে বহুবার নির্মূল কমিটির মঞ্চে বক্তব্য রেখেছেন। নির্মূল কমিটির আন্দোলনের কারণে ৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার শুরু হয়েছে। নির্মূল কমিটির দাবির কারণে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ২০১৭ সালের মার্চে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে।
৭১-এর ঘাতক, দালাল, রাজাকার ও নব্য রাজাকারদের বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও সমাজ গড়ার আন্দোলন আমরা গত ৩০ বছর যেভাবে পরিচালনা করেছি, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার পুনরায় স্থাপিত হবে এবং মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
জেইউ/এমএইচএস