ভ্যাকসিন প্রয়োগে ৮৪ ডাক্তার-নার্সকে প্রশিক্ষণ দিলো ডিএসসিসি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) ভ্যাকসিন প্রয়োগের লক্ষ্যে ৮৪ জন ডাক্তার ও নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটোরিয়ামে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে ডিএসসিসি।
বিজ্ঞাপন
প্রশিক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩০ জন ডাক্তার ও ৫৪ জন নার্সকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডা. ফজলে শামসুল কবির ও ডা. নিশাত পারভীন প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুজনেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষিত জাতীয় প্রশিক্ষক (মাস্টার ট্রেইনার) হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বৈশ্বিক মহামারির শুরু থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশনা ও নেতৃত্বে করপোরেশন জনগণের পাশে থেকে এই দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করে চলেছে। লকডাউন বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব বিষয়ে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করে চলেছেন। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় করোনা মহামারি মোকাবিলায় আমরা লক্ষ্যণীয় সাফল্য পেয়েছি।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশাবাদী, এই ভ্যাকসিন কার্যক্রমেও মেয়রের নেতৃত্বে আমরা সফল হব।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ বলেন, সব ভ্যাকসিনের একটি ছোটখাটো প্বার্শপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। সবার শরীরে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমানও হয় না, কারো কারো হতে পারে। এই টিকা নেওয়ার পর কারো যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, সেই বিষয়ে আমাদের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কি হবে- সে বিষয়ে আমরা আজকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যেসব হাসপাতালে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হবে সেসব হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স-এই বিষয়ে প্রশিক্ষিত হবেন এবং টিকা প্রয়োগের পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে, সে বিষয়ে তারা কোন ধরনের ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করবেন- সেসব বিষয় নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রশিক্ষণ। জনসাধারণ যেন পর্যায়ক্রমে এই ভ্যাকসিন নিতে পারেন এবং কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ যুদ্ধে যেন আমরা জয়ী হতে পারি।
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ২০ নম্বর অবস্থানে আছে। আশা করছি, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগেও আমরা নজির স্থাপন করব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আগামী দিনে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম সুচারুভাবে সফল করার বিষয়েও আমরা আশাবাদী।
এ সময় ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে গুজব প্রতিরোধ করা সবার দায়িত্ব এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে অহেতুক গুজব প্রতিরোধ করার দায়িত্ব আপনাদের, আমাদের, সবার। কারণ, এটা একটা ভ্যাকসিন। মানুষের ভালর জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগের লক্ষ্যে আমরা দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। যাতে করে এই কার্যক্রমকে সুষ্টু-সুন্দরভাবে শেষ করতে পারি। এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।
ভ্যাকসিন কার্যক্রমে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা কি, কারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, এক দিনের প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় যেসব ভ্যাকসিন টিম হবে, সেসব টিমকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের দুজন ডাক্তার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষিত জাতীয় শিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তারাই আজকের এই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আর এটা বড় কোনো জটিল কোনো বিষয় না। তাই এ বিষয়ে একদিনের প্রশিক্ষণই আমি মনে করি গুড এনাফ। কারণ, এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ জটিল কোনো পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে না, এই ভ্যাকসিনটা মাংসপেশিতে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ইপিআই ভ্যাকসিন দিয়ে বিশ্বে আমরা নজির স্থাপন করেছি, আমাদের ডাক্তার-নার্সদের এ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আছে। আশা করি, এর মাধ্যমেই আমরা সফলকাম হব।
আগামী ২৭ জানুয়ারি করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের দিন ২৮ জানুয়ারি থেকে ঢাকা মহানগরীর পাঁচটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকা বিধায় সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন ডাক্তার ও ৫৪ জন নার্সকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
এএসএস/জেডএস