সংগৃহীত ছবি

দেশের আয়তনের তুলনায় প্রতিদিনই কমছে বনভূমির পরিমাণ। যার অন্যতম কারণ, ঘরের আসবাবপত্র অথবা ফার্নিচার তৈরিতে কাঠ ব্যবহার করা। আর তাই কাঠের বিকল্প হিসেবে ফার্নিচার তৈরিতে বাঁশ ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বাঁশ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাও শুরু করেছে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে বাঁশের ওপর ভিত্তি করে অনেক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে উঠেছে। আর এ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিষয়টি মাথায় রেখে ল্যাবরেটরি এবং মাঠ পর্যায়ে বাঁশের ওপর গবেষণা সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাঁশের চাষ, সংরক্ষণ ও বাঁশজাত পণ্য উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। এ লক্ষে ‘নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন (২য় সংশোধন)’ একটি প্রকল্পও চালু রয়েছে।

প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে সংশোধনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. রফিকুল হায়দার বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির প্রায় ৯০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় কোনো ধরনের ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এখনও অনেকগুলো ট্রেনিং বাকি থাকায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল হায়দার বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা কঞ্চি থেকে বাঁশঝাড় করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি। কিন্তু এ পদ্ধতিতে একটা কঞ্চি থেকেই বাঁশঝাড় করা সম্ভব। আমাদের দেশের বাঁশ সহজেই ঘুণে ধরে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁশে ঘুণে না ধরার উপায়ও বের করেছি।

• কঞ্চি থেকে হবে বাঁশঝাড়
• নতুন গবেষণায় ঘুণে ধরবে না বাঁশ
• বাঁশ গবেষণায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ব্যয় ২০ লাখ টাকা
• পরিমাণ উল্লেখে ‘থোকে’ টাকা চাওয়ায় একনেকের নির্দেশনা মানা হয়নি

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বাঁশের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণ নিতে আমরা ৫ জন চীনে গিয়েছিলাম। এ বিদেশ ভ্রমণে ৫ জনের খরচ হয়েছে ২০ লাখ টাকা। এর বাইরেও দেশে ভ্রমণ ব্যয় হয়েছে ২০ লাখ টাকা। চীনে মূলত বাঁশ ব্যবহার বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রে বাঁশ ব্যবহার করছে। আমরাও তাদের মতো বাঁশের ব্যবহার বাড়িয়ে গাছের উপর চাপ কমাতে চাই।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, এ প্রকল্পটি ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া ছয়মাস মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাঁশ নিয়ে গবেষণা আরও বেশি প্রয়োজন। কারণ বনভূমি রক্ষা করতে হলে বাঁশের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরাতেও বাঁশের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করছে। চীনও অনেক আগের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাঁশের ব্যবহার শুরু করেছে। এটা পরিবেশবান্ধব বিধায় এসব পণ্যের দেশ-বিদেশে চাহিদা রয়েছে। এজন্য আমাদের এখন বাঁশের গবেষণায় জোর দিতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে

প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি হবে না মর্মে বলা হলেও কতিপয় অঙ্গেও ব্যয় হ্রাস করে নতুন অঙ্গ ‘ব্যাম্বো ওয়ার্কশপ শেড’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে মেয়াদ বৃদ্ধি করে ‘ব্যাম্বো ওয়ার্কশপ শেড’ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা দিতে হবে।

প্রকল্পের হালনাগাদ আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালককে জানাতে হবে।

প্রকল্পের আওতায় অসমাপ্ত খাতগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেনো সম্পন্ন করা যায়নি এ বিষয়টি জানা প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় বিভাজন ছকে কোন অঙ্গের পরিমাণ/একক ‘থোক’ উল্লেখ না করার বিষয়ে একনেকের অনুশাসন রয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এ অনুশাসন মানা হয়নি।

সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে, প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদকাল সমাপ্তির কমপক্ষে ৩ মাস আগে প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে ও আইএমইডিতে দেওয়ার বিধান রয়েছে। সংশোধনীর প্রস্তাবনায় প্রকল্পে এ বিধান মানা হয়নি।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য

১. বাঁশের চাষ, ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষণা
২. বাঁশের মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করা
৩. উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ ও প্রান্তিক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।

অনুমোদিত কার্যক্রম হচ্ছে

১. গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা
২. অফিস ভবন ও গবেষণাগার নির্মাণ
৩. গবেষণাগারের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়
৪. সেমিট পাকা ব্যারাক নির্মাণ
৫. বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ (৭০০ রা:মি:), রাস্তা নির্মাণ ৫০০ বর্গমিটার
৬. নার্সারি শেড নির্মাণ একটি
৭. নির্মাণ কাজের জন্য পরামর্শক সেবা
৮. যানবাহন ক্রয় ডাবল কেবিন পিক আপ ১টি, মাইক্রোবাস ১টি, মোটরসাইকেল ২টি
৯. মাটি ভরাট, বাউন্ডারি ওয়াল, ভূমি উন্নয়ন, এপ্রোচ রোড, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি।

এসআর/এমএইচএস