ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা/ ছবি: সংগৃহীত

হামলা-গোলাগুলি, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বিভিন্ন সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে হওয়া এ ভোটের এখন চলছে গণনা। এতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা ফলের অপেক্ষায় রয়েছেন।

নির্বাচনে ভোটগ্রহণ বিষয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। যদিও নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেছেন, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে।

এর আগে সকাল ৮টায় নির্বাচনকে ঘিরে প্রাণহানি হয়। নগরের পাহাড়তলীতে আপন ভাই সালাউদ্দিন কামরুলের ছুরিকাঘাতে নিহত হন তার ভাই নিজামউদ্দীন মুন্না। নিহত মুন্না ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহম্মদের কর্মী ছিলেন। অপরদিকে, কামরুল একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিনের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন।

পরে সকাল ১০টার দিকেনগরের খুলশী থানার ইউসেপ আমবাগান কেন্দ্রে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আলাউদ্দিন আলো (২৮) নামে এক পথচারী নিহত হন।

ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে নিহত আলাউদ্দিনের স্বজনদের আহাজারি

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের জেএম সেন স্কুল ও কলেজ ভোটকেন্দ্রের দখল নিয়ে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইসমাইল বালী ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী পুলক খাস্তগীরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ইভিএম ভাঙচুরের জেরে দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

দুপুর ২টার পর আকবর শাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনির পি ব্লকে ৯নং ওয়ার্ডের কোয়াক স্কুল ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে।

এছাড়া ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডসহ কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন সহিংসতা-সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। ঘটে হাতাহাতি, মারামারি, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিকেল ৩টার দিকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ভোট বর্জনের কথা জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী মোহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম ও বিএনপি মনোনীত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারা বেগম মনি।

এদিকে, সকাল ৯টায় নগরের বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। অপরদিকে সকাল ১০টার দিকে বাকলিয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রশাসনিক ভবন কেন্দ্রে ভোট দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।

হামলাকারীদের ধাওয়া দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা

ভোট দেয়ার পর রেজাউল করিম নগরজুড়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে উল্লেখ করে বিপুল ভোটে জয়ের আশা ব্যক্ত করেন। তবে ভোট দেয়ার পর ডা. শাহাদাত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ইসির কর্মকর্তারা মিলে আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলের সিনিয়র মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ নির্বাচনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিশি তাণ্ডব চলছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নির্বাচন নামে তামাশা চলছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় প্রায় ৪০টি কেন্দ্রে বিএনপি হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মোট সাত জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, বাংলাদেশে ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী। অন্যদিকে, ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। 

চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। এ নির্বাচনে ৪০টি ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র এবং ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ রয়েছে।

এফআর