মাদক কারবার ও চাঁদাবাজির কেন্দ্রবিন্দু কিশোর গ্যাং
পশ্চিমা দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি চললেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সামনে আসে ২০১৬ সালে রাজধানীর উত্তরার স্কুলছাত্র আদনান হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। এরপর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ সংস্কৃতির খবর পাওয়া যেতে থাকে। ধীরে ধীরে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের গণ্ডি ছাড়িয়ে এর চর্চা অপরাধে রূপ নেয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, কিশোর গ্যাং এখন আর এলাকায় প্রভাব বিস্তারে সীমাবদ্ধ নেই, বরং মাদক কারবার ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মাদক কারবার ও চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট চালাতে কিশোররা খুন করতেও পিছপা হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
কিশোর গ্যাং এখন আর রাজধানী ঢাকা বা বড় বড় শহরগুলোতে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামেও। বছর বছর কিশোরদের মধ্যে বাড়ছে গ্যাং সংস্কৃতির চর্চা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্য এ ধরনের চর্চায় কড়াকড়ি ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ২৯০ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করেছে, যা ২০১৯ ও ২০২০ সালের তুলনায় বেশি। ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত র্যাবের হাতে ৬০৮ জন কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
র্যাব সূত্রে জানা যায়, শুরুর দিককার কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম এবং বর্তমানের কার্যক্রমের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের কেন্দ্র করে মাদক কারবারিরা দেশে বড় ধরনের মাদক সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। মাদকের ক্রেতা-বিক্রেতা উঠতি বয়সের এ কিশোররা। এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজির ক্ষেত্রেও প্রভাবশালীদের মদদপুষ্ট হয়ে তারা ভয়-ভীতি দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলছে।
মাদক কারবারি ও চাঁদাবাজি বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোরদের এক গ্যাংয়ের সঙ্গে অন্যটির মারামারি চলছে। এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য তারা উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোটখাট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে মারামারি-খুনোখুনি পর্যন্ত করছে।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের লাগাম টানতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী যেসব বাহিনী কাজ করছে, তার মধ্যে র্যাব অন্যতম। কিশোর গ্যাং দমনে বছরব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে আসছে র্যাব। এছাড়া কিশোরদের এই গ্যাং সংস্কৃতি থেকে বিরত রাখতেও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে এলিট এ বাহিনী।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ‘সবার হোক একটাই পণ, কিশোর অপরাধ করব দমন’ শীর্ষক একটি জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা কার্যক্রম ও এ সংক্রান্ত টিভি বিজ্ঞাপন উদ্বোধন করে।
এ বিষয়ে র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা সবসময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতারে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করি। গত বছর আমরা ২৯০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে গ্রেফতার করেছি।
তিনি বলেন, সবাই যেন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রতি সচেষ্ট থাকে এবং কিশোররা যেন এ গ্যাং সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট না হয়, সেজন্য আমরা নিয়মিত প্রচারণাও চালাই। এরই অংশ হিসেবে গত বছর এ সংক্রান্ত একটি টিভিসি উদ্বোধন করা হয়েছে।
এমএসি/আরএইচ