শ্যামপুর খালে চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনের পর - ছবি : ঢাকা পোস্ট

ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর গত এক মাসে ৩টি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট থেকে ৫৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য-মাটি অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।      

বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শ্যামপুর খালে চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমরা খালের দায়িত্ব নিয়েছি এক মাসের মতো হলো। এরই মাঝে ৫৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য আমরা অপসারণ করেছি। আগামী দুই মাসে তা দুই লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। নিজস্ব অর্থায়নে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, একটি সুষ্ঠু পরিবেশ আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব। তবে কাজটি কঠিন। 

তিনি বলেন, গত ২ জানুয়ারি থেকে আমরা ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছি। আগামী বর্ষার আগেই যেন সব খাল পরিষ্কার করতে পারি, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারি, পানি প্রবাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারি সেই চেষ্টা চলছে। আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। খালের পাশের দখল হওয়া জমি উদ্ধার করা হবে। খালের পাশে যাতায়াত ও হেঁটে চলা পথের ব্যবস্থা করা হবে। সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। যতটা সম্ভব নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে। 

শ্যামপুর খালে চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনের পর - ছবি : ঢাকা পোস্ট

ডিএসসিসির মেয়র বলেন, শ্যামপুর অনেক বড় খাল, এখানে শাখা-প্রশাখা বেশি। এগুলোতে আবর্জনা-ময়লার স্তুপ হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, অনেক দিন এগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। পানি প্রবাহ বা পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা এখানে নেই। সামনের কর্মযজ্ঞ অত্যন্ত দুরূহ, ভয়াবহ পরিবেশ রয়েছে। এখানে একটি অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল রয়েছে। তাদের প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলোর সাথে এগুলোর সংযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে অব্যবস্থাপনা ও ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করছি, তাদের খালগুলো যাতে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু স্থাপনা রয়েছে, বেড়িবাঁধ সংলগ্ন। সেখানে স্লুইচ গেটসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর না করলে, আমরা এখনই ব্যবস্থা না নিলে আ,আদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে। আগামী বর্ষায় ঢাকাবাসীকে সুফল দেওয়া, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখার যে লক্ষ্য তা পূরণ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। 

‘খালের দুপাশ দখলে রাজনৈতিক মদদ থাকার কথা শোনা যায়, আপনারা কি পদক্ষেপ নেবেন?’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমরা জোরালোভাবে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে মান্ডা খালের পাশে থাকা জায়গা দখলমুক্ত করেছি। খালের প্রশস্ততার জন্য সিএস জরিপে যা আছে, মানচিত্রে যা আছে, আমরা সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ জমি অবমুক্ত করব। 

এই এলাকার পানি দূষণের বড় কারণ শিল্পবর্জ্য, শিল্পবর্জ্য খালে এসে পড়ছে। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, সবমিলিয়ে যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে সবকিছু করা হয়েছে, তাতে কঠিন অবস্থা, দুরূহ অবস্থা বিরাজ করছে। এই এলাকার ব্যাপক কারখানা গড়ে উঠেছে। এক সময় এই এলাকাকে শিল্প এলাকা হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখানে যত্রতত্রভাবে কারখানা হয়েছে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা পরিপালন করা হয়নি। তাই সব মিলিয়ে দুরূহ অবস্থা। 

শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দিক নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এ বিষয়ে কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। এরই মাঝে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছি, যাতে আইনগুলো আরও কঠোরভাবে পরিপালন করা হয়। আশা করছি, পরিবেশ অধিদপ্তরও তাদের দায়িত্বগুলো সুচারুরূপে পালন করবে। 

পরে ডিএসসিসি মেয়র জুরাইন কবরস্থানে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় মতো কাজ শেষ না করার কারণে এখানে ঠিকমতো কবর দেওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য আমি পরিদর্শনে এসেছি। আগামী জুন মাসেই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

এ সময় ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, প্রত্যেক সোমবারে আমরা চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো পর্যালোচনা করে থাকি। আগামী পর্যালোচনা সভায় আমরা জুরাইন কবরস্থানের কার্যক্রম পর্যালোচনা করব। আগামী জুনের মধ্যেই জুরাইন কবরস্থানের দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা রয়েছে। না হলে, আমরা সেই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে বাকি কাজের জন্য হয়তো নতুন ঠিকাদার ব্যবস্থা করব। যাতে সময় মতো এ কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের, মুন্সী মো. আবুল হাসেম, কাজী মো. বোরহান উদ্দিন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এএসএস/এইচকে