মিয়ানমারের ‘লাইন অফ’, হচ্ছে না ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন/ ফাইল ছবি
চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে কি না- এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ঢাকা-নেইপিদো বৈঠকটি বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির এ বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখনও এটা জানি না। আমাদের অফিসিয়াল (কর্মকর্তা) যারা আছেন তারা এটা নিয়ে কাজ করছেন। বৈঠকটি আগামীকাল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে কন্টাক্ট (যোগাযোগ) করা যাচ্ছে না। কারণ ওরা (মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ) সব লাইন অফ করে দিয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
তবে এ বৈঠক নিয়ে ঢাকা নিযুক্ত মিয়ানমার ও চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি সকাল বেলাও এটা নিয়ে যোগাযোগ করেছি। আমরা চাই, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান থাকুক। প্রত্যাবাসন ইস্যুতে সরকার-সরকার চুক্তি হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিশেষে হয়নি। সুতরাং দ্য প্রসেস উইল কনটিনিউ (প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে)।’
এদিকে, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও তিনি জানান, মিয়ানমারে সম্প্রতি ক্ষমতার যে রদবদল হয়েছে এ পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না।
বিজ্ঞাপন
আগেরবার যারা নিপীড়িত হয়ে এসেছে তাদের আমাদের জনগণ গ্রহণ করেছে। এখন আমাদের জনগণের গ্রহণ করার মুডে আর নেই। আমরা আর নিতে রাজি নই, অন্যরা নিয়ে যাক।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ের মিটিংয়ের জন্য মিয়ানমারের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার দিকে বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব।
গত ১৯ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসার বিষয়ে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়।
কিন্তু এর আগেই দেশটির রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। গত সোমবার অং সান সু চিসহ দলটির অন্যান্য মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল এনএলডির জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। মিয়ানমারে এ সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা করা হয়।
মিয়ানমারে সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে এর আগে প্রত্যাবাসন হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস আছে, আগে যখন মিয়ানমারে সামরিক সরকার ছিল ৭৮ বা ৯২ সাল; তখনও প্রত্যাবাসন হয়েছে। তা হলে এই সময়ে নয় কেন? বরং আমি বলব মিয়ানমারের জন্য এটা সুযোগ, তারা এই সুযোগটা নিতে পারে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সবার কাছে অ্যাপ্রোস করেছি। আমরা মিয়ানমারের কাছে অ্যাপ্রোস করেছি, পৃথিবীর সব রাষ্ট্রগুলোর কাছে করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যারা এসব নিয়ে বেশি বেশি বলেন, নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তাদের ব্যবসা মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েকগুন বেড়েছে।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নতুন করে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা আবারও বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ নিতে পারে। এই অবস্থায় সরকার সীমান্তে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না- জবাবে মোমেন বলেন, ‘আমরা আমাদের বর্ডার সিকিউর (সীমান্ত নিরাপদ, যাতে আর কোনো রোহিঙ্গারা প্রবেশ না করতে পারে) করে রেখেছি। আগেরবার যারা নিপীড়িত হয়ে এসেছে তাদের আমাদের জনগণ গ্রহণ করেছে। এখন আমাদের জনগণের গ্রহণ করার মুডে আর নেই। আমরা আর নিতে রাজি নই, অন্যরা নিয়ে যাক।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
চীনের ওপর এবারের প্রত্যাবাসন ইস্যুতে ঢাকা আস্থা রাখছে কি না- জবাবে মোমেন বলেন, ‘চীন আমাদের বন্ধু দেশ, অন্যরাও আমাদের বন্ধু দেশ। চীন এ বিষয়ে কিছু অগ্রসর হয়ে এসেছে। জাপানও অগ্রসর হয়েছে, তবে চীনেরটা দৃশ্যমান হচ্ছে। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখেছি।’
রোহিঙ্গা সমাধান নিয়ে অনেক দেশ কথা বললেও তারা এখনও মিয়ানমারে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মোমেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সবার কাছে অ্যাপ্রোস করেছি। আমরা মিয়ানমারের কাছে অ্যাপ্রোস করেছি, পৃথিবীর সব রাষ্ট্রগুলোর কাছে করেছি। আমরা জাতিসংঘের কাছে গেছি, অ্যাকান্ডন্টিবিলিটির জন্য কোর্টে গেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যারা এসব নিয়ে বেশি বেশি বলেন, নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তাদের ব্যবসা মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েকগুন বেড়েছে।’
‘তারাই বলেছেন এটা গণহত্যা। এসব বলার পরও তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকই করে যাচ্ছেন। যারা আজকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বলছেন, তারা কিন্তু ওইদিকে ঠিকই আছেন।’
এনআই/এফআর