লংমার্চে যাচ্ছে না বিবেকবান নাগরিক সমাজ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির সমর্থনে ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে যে লংমার্চের ডাক দিয়েছিল ‘বিবেকবান নাগরিক সমাজ’, সেটি আর হচ্ছে না।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে এ কথা জানান বিবেকবান নাগরিক সমাজের পক্ষে কবি ও লেখক রাখাল রাহা।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আপনারা জানেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাহিনীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে আসছে। রাষ্ট্রের টাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে। আমাদের টাকায় জনগণের টাকায় ভিসি বেতন পায়। আমাদের সন্তানদের সেখানে পাঠানো হয়, আপনি তাদের নিরাপত্তা দেবেন, তাদের শিক্ষা দেবেন। আপনি প্রশাসনের লোক এনে তাদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করবেন পেটোয়া বাহিনী দিয়ে, ছাত্রলীগ লেলিয়ে দিয়ে আপনি আপনার গদি রক্ষা করেন। এই যে পরিস্থিতি এই বিষয়ে আমাদের কাছে জবাব দিতে হবে। আমরা ছেড়ে দেবো না সামনের দিনগুলোতে। আমরা এই দেশের মানুষ, আমাদের সন্তানরা এই দেশেই পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি কেন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে ধ্বংস করছেন? কেন আজকে আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন পরিস্থিতি? কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপদার্থদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন?
বিজ্ঞাপন
রাখাল রাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর জন্য লংমার্চ ও যাত্রাপথে পাঁচ জায়গায় সমাবেশ করার কথা ছিল। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙায় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রচিন্তার সমন্বয়ক দিদারুল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কমিটমেন্টে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙতে সম্মত হওয়ায় আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
যদি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয় তাহলে আমরা অভিভাবকরা আবার মাঠে নামব।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনায় দুইশ থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- আন্দোলনরত দুইশ-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’
পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। ৭ দিন পর অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২২ মিনিটে পানি পান করে তারা অনশন ভাঙেন। তবে অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
এমএইচএন/এইচকে