পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন- ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল সামিট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রায় সোয়া ঘণ্টার ওই ভার্চুয়াল সম্মেলনে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রায় সব ইস্যুতে কথা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সইয়ের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, এখানে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে। সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, তিনি সীমান্তবাহিনীকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেবেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয়

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

মন্ত্রী জানান, করোনার ভ্যাকসিনের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশে হিসেবে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ প্রাধান‌্য দেওয়ার অঙ্গিকার করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।’

তিস্তা চুক্তির অবস্থা কী
ভারত থেকে বাংলাদেশে যে ৫৪টি নদী প্রবেশ করেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে তিস্তা। এটি ভারতের সোলামো লেক থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে এটি চিলমারির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিনের একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার মুখে তা আটকে যায়।  এরপর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি আশ্বস্ত করেন যে তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হবে। কিন্তু এর পর পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও তিস্তা সমস্যার কোন সমাধান এখনো হয়নি। 

তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে আসার বিষয়টি নির্ভর করছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চলতি বছরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর আসার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে সেভাবে অনুষ্ঠান পালন করেনি ঢাকা। ফলে আসা হয়নি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিরও। 

বাংলাদেশ-ভারতের অর্থনীতি আরও সংহত করার ওপর গুরুত্বারোপ
এরআগে বাংলাদেশ-ভারত ভার্চুয়াল সামিটের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,  ‘আমি বিশ্বাস করি, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐক্যমতের সুযোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।’ 

প্রতিবেশী দেশ দু’টির মধ্যে প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এই বিষয়ে অনুঘটক হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি বড় উদাহরণ হলো চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করা; যা আমরা আজ উদ্বোধন করবো।’

 ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা রেখেছে।’

৫৫ বছর পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগ চালু
১৯৬৫ সালের আগে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে রেল যোগাযোগ ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সীমান্ত এলাকার প্রায় নয় কিলোমিটার রেললাইন তুলে নেওয়া হয়।

২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের বন্ধ রেল সংযোগগুলো চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রেল সংযোগটি উদ্বোধন করা হলো। বৈঠক শেষে এর উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।   

৭টি সমঝোতা চুক্তি 
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাণিজ্য, কৃষি, জ্বালানি ও পরিবেশসহ অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৭টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকের আগে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। 

সমঝোতা স্মারকগুলো হলো-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সিইও ফোরাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হাইড্রোকার্বন বিষয়ে সহযোগিতা, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হাতি সংরক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল জাদুঘর ও ভারতের জাতীয় জাদুঘর মধ্যে সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও বরিশালের স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি। 

এনআই/এফআর/এনএফ