উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) পৃথক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী লতা মঙ্গেশকরের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

রোববার এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, এই সুরসম্রাজ্ঞীর মৃত্যুতে উপমহাদেশের সংগীতাঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে চিরদিন এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

বিরোধী দলীয় উপনেতার শোক

লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে বিশ্বসঙ্গীতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা হয়তো কখনোই পূরণ হবার নয়। লতাজী সঙ্গীত ভূবনে অতুলনীয় হয়েই থাকবেন।

রোববার এক শোক বার্তায় প্রয়াত লতা মঙ্গেশকরের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন জিএম কাদের।

জি এম কাদের আরও বলেন, লতা মঙ্গেশকর দীর্ঘ ৭০ বছর উপমহাদেশের সঙ্গীত প্রেমিদের সুরের মায়াজালে বেঁধে রেখেছিলেন। হিন্দি ও বাংলাসহ ভারতের ৩৬টি ভাষায় গান গেয়ে কোটি কোটি শ্রোতাদের হৃদয়ের রানী হয়েছিলেন তিনি।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর শোক

লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোকবার্তায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার এক অতুলনীয় ক্ষমতা ছিল। তার মৃত্যুতে উপমহাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো। সুরের জাদু দিয়ে তিনি উপমহাদেশের কোটি কোটি সঙ্গীতপ্রেমী মানুষকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিলেন এবং তাদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। তিনি তার সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে চিরদিন এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

রোববার সকালে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন উপমহাদেশের সংগীতের প্রবীণ মহাতারকা লতা মঙ্গেশকর। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

প্রায় চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সম্প্রতি অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। দিতে হয় ভেন্টিলেশনে। সেখান থেকে আর ফেরানো যায়নি লতাকে।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর লতার জন্ম ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের এক মারাঠি পরিবারে। বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর মারাঠি, তবে শাস্ত্রীয় সংগীতে পারদর্শী। থিয়েটারও করতেন। আর মা সেবন্তী ছিলেন কোঙ্কনী গায়িকা। বাবা-মায়ের কাছ থেকেই শৈশবে গানের প্রতি টান তৈরি হয় লতার।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান। তার আগে অবশ্য বাবার হাত ধরেই অভিনয় ও গান শিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। ১৩-১৪ বছর বয়সেই প্রথম বার সিনেমায় গান গাওয়া। মরাঠি ছবিতে। মুম্বাই যাওয়ার পর ১৯৪৮ সালে প্রথম হিন্দি ছবিতে গান। ‘মজবুর’ ছবিতে।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতাই ছিলেন সবার বড়। চল্লিশের দশকে গায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তারপর পঞ্চাশ, ষাট-সত্তরেরর দশক থেকে নব্বইয়ের দশকেও চুটিয়ে প্লে-ব্যাক করেন লতা মঙ্গেশকর। 

বাংলা ভাষায় মোট ১৮৫টি গান গেয়েছেন তিনি। বাংলায় তার গান গাওয়ার শুরু হেমন্ত কুমারের হাত ধরে। নিজে কখনও গাওয়া গানের রেকর্ড না রাখলেও, বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে হিসেব বলছে গোটা জীবনে ৫০ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন কিংবদন্তী এই গায়িকা।

চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শোক

উপমহাদেশের সংগীতের মহাতারকা কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রোববার (৬ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি নিখিল দাস ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন শোক প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, কিংবদন্তী শিল্পী লতা মঙ্গেশকর সঙ্গীতের জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। আধুনিক সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য তিনি পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের কাছে স্মরণীয় ও শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন। আমরা এই কণ্ঠশিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

এইউএ/পিএসডি/এএইচআর/এসএসএইচ/এইচআর