নতুন কমিশন না হলেও শূন্যতা হবে না
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আগামীকাল শেষ হচ্ছে কেএম নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ। তবে বিদায়ের পর হুদা কমিশনের পর যদি নতুন কমিশন গঠনে বিলম্ব হয় তাহলেও কোনো শূন্যতা তৈরি হবে না।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিদ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (বাংলা পাঠ) এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ এর মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
কাল বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে নতুন কমিশন গঠিত না হলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানে কিংবা আইনে এ ধরনের কোন শূন্যতার কথা নাই। সেজন্য কাল এই কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে এবং তারপরও যদি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে একটু বিলম্ব হয় তাহলে আইনে শূন্যতা হিসাবে গণ্য হবে না।
মেয়াদ শেষ হলে তারা অফিসিয়াল কোন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না তারা সেটা পারবেন না। কারণ সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে তারা পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করবেন। পাঁচ বছর শেষ হয়ে গেলে এমন কথা নাই যে যারা স্থলাভিষিক্ত হবেন তারা না আসা পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন। এই সময়ে তো ইলেকশন কমিশন বন্ধ হয়ে যাবে না। অ্যাডমিনিস্টেটিভ দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু নতুন নির্বাচন কমিশন আসলেই কোনো নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারবে। এই কমিশন তার যে দায়িত্ব সেটা যথাযথ পালন করতে পেরেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সার্চ কমিটিতে বিএনপি কেন মতামত দিচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংসদ আইন পাশ করে সার্চ কমিটি গঠন করেছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে গত বছরের ডিসেম্বরের ২০ তারিখ থেকে শুরু করে এই বছরের জানুয়ারির ১৭ তারিখ পর্যন্ত যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হয়েছে, সেই রাজনৈতিক দলগুলো এবং যে দলগুলো সংলাপে যায়নি আজকে যারা সার্চ কমিটিতে যায়নি সকলেরই কিন্তু একটা দাবি ছিল একটা ইলেকশন কমিশন গঠনের আইন করা উচিত।
বিএনপি কেন আলোচনায় অংশ নিল না সেটিকে গণতান্ত্রিক মনে করেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, অবশ্যই গণতান্ত্রিক না। এটা নিয়ে তো প্রমাণের কিছু নাই যে গণতান্ত্রিক না। গণতন্ত্রের কথাই হচ্ছে সংলাপ। সেখানে প্রত্যেকবারই কোনো পদক্ষেপকে যদি তারা ইতিবাচকভাবে না নিয়ে নেতিবাচকভাবে নেয় তাহলে আমার মনে হয় জনগণ সেটিকে গণতান্ত্রিক বলে মনে করবে না।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বাস করে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি নির্বাচন, সেজন্যই তার সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। যার ফসল হচ্ছে আজকের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র, নির্ভুল ভোটার তালিকা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), নির্বাচন কমিশনের আধুনিক অবকাঠামো, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন ২০২১, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন আইন ২০২২ ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আনিসুল হক বলেন, স্বাধীনতার পর বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে অনেক সরকার এসেছে, কিন্তু কেউ এই আইন করার সাহস দেখায়নি যা দেখিয়েছেন হাসিনা। এ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন নির্বাচন কমিশনকে এভাবেই সহযোগিতা করে যাবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়, যা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রচনা করেছিলে মুক্তিযোদ্ধারা। তারা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, মর্যাদা দিয়েছেন। জাতিকে দিয়েছে বীরত্বের তকমা। তাদের অবদান ভুলে গেলে চলবে না। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান তুলে ধরতে হবে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ আইন বাংলা করায় তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন এবং উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আরপিও বাংলা পাঠ করেছি। এমন মাসে এটা করেছি যখন ফেব্রুয়ারি মাস; ভাষার মাস। এই কাজটা করতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। যারা ভোটার আছে তারা অনেক উপকৃত হবেন বাংলা পাঠ পড়তে পেরে। সীমানা নির্ধারণ আইন খুব জটিল। তবে যারা রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এবং করোনা পজিটিভ হওয়ায় নির্বাচন কমিশনার ব্রি: জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.) অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি।
এসআর/আইএসএইচ