প্রসবোত্তর বিষণ্নতা কী, কেন হয়, কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
নারীর জীবনে মাতৃত্ব একটি অত্যন্ত আনন্দময় এবং তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা। তবে অনেক সময় এই আনন্দকে ছাপিয়ে যায় মানসিক সমস্যার বোঝা। সন্তান জন্মের পর কিছু মা সাময়িক মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন, যাকে বেবি ব্লুজ (Baby Blues) বা Postpartum Blues বলা হয়। যা সাধারণত দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা যায়।
এটি একটি হালকা মানসিক অবস্থা, যেখানে নতুন মা কান্নাকাটি, ক্লান্তি বা অস্থিরতা, মেজাজের পরিবর্তন, উদ্বেগ, বিরক্তি এবং ঘুমের ব্যাঘাতের মতো উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। সাধারণত সন্তান জন্মের ৩-৪ দিন পর এটা শুরু হয়, ৫-৭ দিনের মধ্যে তীব্রতর হয় এবং প্রায় ১২ দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে হ্রাস পায়।
বিজ্ঞাপন
যদিও এই লক্ষণগুলো তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক সাময়িক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবুও এগুলোর স্থায়িত্ব যদি ২ সপ্তাহের বেশি হয়, তবে তা চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বেবি ব্লুজ অনেক ক্ষেত্রে সাময়িক হলেও কিছু মায়ের ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র আকার ধারণ করে, যা পরবর্তীতে প্রসবোত্তর বিষণ্নতা (পিপিডি)-তে পরিণত হতে পারে। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বেবি ব্লুজের তুলনায় অনেক বেশি গুরুতর এবং দীর্ঘমেয়াদি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে মায়ের দৈনন্দিন জীবন, সন্তানের প্রতি যত্ন ও আবেগগত সম্পর্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রসবোত্তর ব্লুজ সাধারণত প্রসবের পর ৫০-৮০ শতাংশ নারীর মধ্যে দেখা যায়। গবেষণা প্রমাণ করে যে, প্রসবোত্তর ব্লুজে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ (প্রতি ৫ জনে ১ জন) পরবর্তীতে প্রসবোত্তর বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। অর্থাৎ ব্লুজকে অবহেলা করা যায় না, বরং এটি প্রসবোত্তর বিষণ্নতার একটি সম্ভাব্য পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বব্যাপী প্রজননক্ষম নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই সমস্যায় আক্রান্ত হন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবন, মাতৃত্বকালীন অভিজ্ঞতা, এমনকি শিশুর বিকাশকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে উভয় এলাকায়ই প্রসবোত্তর বিষণ্নতার প্রাদুর্ভাব উচ্চমাত্রার। কিছু গবেষণায় এর হার ১৮ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
তবুও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা শনাক্ত হয় না, কারণ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, সামাজিক কুসংস্কার এবং নারীদের মধ্যে উপসর্গগুলো ‘স্বাভাবিক মাতৃত্বজনিত ক্লান্তি’ হিসেবে বিবেচনা করার প্রবণতা বিদ্যমান। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ; সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, এবং পরিবারে নারীর প্রতি সহায়তার অভাব এই সমস্যার মূল ঝুঁকিপূর্ণ কারণ।
অনেক নারীর ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি বা বাবার বাড়ির চাপ, স্বামীর অবহেলা এবং একাধিক সন্তানের দায়িত্বও মানসিক চাপে পরিণত হয়। নারীরা প্রায়ই পরিবারের কাছে মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করেন এবং পরিবারও এটিকে রোগ হিসেবে না দেখে অবহেলা করে। এর ফলে উপসর্গগুলো গুরুতর আকার ধারণ না করা পর্যন্ত চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
প্রসবোত্তর বিষণ্নতার উপসর্গগুলোকে সাধারণ বিষণ্নতার উপসর্গের সঙ্গে তুলনা করলে কিছুটা মিল পাওয়া যায়, তবে এর প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
বেবি ব্লুজ-এ সাধারণত নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা যায়—
অতিরিক্ত দুঃখবোধ বা হতাশা: এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো অতিরিক্ত দুঃখবোধ বা হতাশা, যেখানে মা নিয়মিত গভীর দুঃখে ভোগেন, অকারণে কেঁদে ফেলেন, হাসি-আনন্দ হারিয়ে ফেলেন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাহীন হয়ে পড়েন।
প্রসবোত্তর বিষণ্নতার কারণগুলো বহুমাত্রিক। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটির মধ্যে অন্যতম হলো হরমোনের পরিবর্তন। গর্ভকাল ও সন্তান জন্মের পর শরীরে হরমোনের দ্রুত পরিবর্তন নারীর মেজাজকে প্রভাবিত করে।
উদ্বেগ ও আতঙ্ক: সন্তান বা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করেন। পাশাপাশি দেখা দেয় উদ্বেগ ও আতঙ্ক, যা নিয়ন্ত্রণহীন ও বারবার ফিরে আসে। সন্তানের সুস্থতা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা, অমূলক ভয়, হৃৎস্পন্দন দ্রুত হওয়া বা শ্বাসকষ্টের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
অতিরিক্ত ক্লান্তি: অনেক সময় মায়ের মধ্যে অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দেয়, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলেও শরীর ও মন শক্তিহীন লাগে, শিশুর যত্ন নেওয়াই দুর্বোধ্য কষ্টকর হয়ে ওঠে।
আগ্রহহীনতা: পূর্বে যেসব কাজে আনন্দ পেতেন, সেসবের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, এমনকি সন্তানের প্রতিও।
অপরাধবোধ ও আত্মসম্মানবোধের অভাব: এর সঙ্গে যুক্ত হয় আগ্রহহীনতা বা অ্যানহেডোনিয়া, যেখানে পূর্বের আনন্দদায়ক কাজ বা এমনকি সন্তানের সঙ্গেও সময় কাটাতে অনীহা তৈরি হয়, ফলে মা-শিশুর আবেগীয় সম্পর্ক দুর্বল হয়। মনে করেন তিনি ভালো মা নন বা সন্তানের যত্ন নিতে অক্ষম। বেশিরভাগ মা এ অবস্থায় প্রবল অপরাধবোধ ও আত্মসম্মানবোধের অভাব অনুভব করেন, নিজেদের ব্যর্থ মা হিসেবে ভাবেন এবং সাহায্য চাইতেও লজ্জা পান।
মনোসংযোগের অভাব: এছাড়া মনোযোগের ঘাটতি ও সিদ্ধান্তহীনতা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। সহজ কাজ শেষ করতে বিলম্ব, সহজ সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যা হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যাওয়া বা শিশুর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যাওয়া এর উদাহরণ।
ঘুম ও ক্ষুধার সমস্যা: ঘুম ও খাদ্যাভ্যাসেও বড় পরিবর্তন দেখা দেয়, কেউ অনিদ্রায় ভোগেন, আবার কেউ অতিরিক্ত ঘুমান, কারও ক্ষুধা বেড়ে যায়, কারও আবার ক্ষুধা কমে যায় ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
আত্মহত্যার চিন্তা: সবচেয়ে ভয়ংকর উপসর্গ হলো আত্মহত্যার চিন্তা বা শিশুর প্রতি ক্ষতিকর আচরণ করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। যা অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজনের সংকেত। এসব উপসর্গ যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় এবং দৈনন্দিন জীবনে বাধা সৃষ্টি করে, তবে তা প্রসবোত্তর বিষণ্নতার নির্দেশক। বিশেষত আত্মহত্যার চিন্তা বা শিশুকে ক্ষতি করার কল্পনা করলে পরিবারকে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা হেল্পলাইনের সাহায্য নিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা না হওয়া এবং চিকিৎসা না নেওয়ার প্রবণতা। ফলে অনেক নারী চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন ভোগেন। প্রসবোত্তর বিষণ্নতার কারণগুলো বহুমাত্রিক। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটির মধ্যে অন্যতম হলো হরমোনের পরিবর্তন। গর্ভকাল ও সন্তান জন্মের পর শরীরে হরমোনের দ্রুত পরিবর্তন নারীর মেজাজকে প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুন
এছাড়া যেসব নারী আগে বিষণ্নতা বা উদ্বেগে ভুগেছেন, তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। প্রসবের পর শারীরিক দুর্বলতা এবং শিশুর যত্নে অনিদ্রা বিষণ্নতাকে বাড়িয়ে দেয়। স্বামী বা পরিবারের সমর্থন না থাকলে মায়ের মানসিক চাপ বহুগুণে বেড়ে যায়। এছাড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাপ তো রয়েছেই, যেমন, ছেলে সন্তান জন্মের চাপ, যৌতুক বা পারিবারিক কলহ, আর্থিক সংকটও এই সমস্যার বড় কারণ।
উপরন্তু, দেশে পর্যাপ্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কাউন্সিলরের অভাব এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মানসিক স্বাস্থ্য স্ক্রিনিংয়ের অনুপস্থিতি সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলে, যার কারণে প্রসবোত্তর বিষণ্নতা প্রায়ই সঠিকভাবে শনাক্ত ও চিকিৎসা হয় না।
মনস্তাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা
প্রসবোত্তর বিষণ্নতা মোকাবিলায় মায়েদের জন্য বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য পদ্ধতি খুব সাহায্য করে। সবচেয়ে প্রচলিত হলো কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, যেখানে মা শেখেন কীভাবে নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করা যায় এবং ইতিবাচকভাবে চিন্তা করা যায়।
আরেকটি হলো ফ্যামিলি থেরাপি, যেখানে পুরো পরিবার একসাথে আসেন এবং মায়ের মানসিক অবস্থা, সম্পর্কের সমস্যা ও পরিবারের মধ্যে যোগাযোগের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রসবোত্তর বিষণ্নতার ক্ষেত্রে এই থেরাপিগুলো বিশেষভাবে কার্যকর, কারণ অনেক সময় মা একা বা বোঝাপড়ার অভাবে মানসিক চাপ অনুভব করেন।
মনোবৈজ্ঞানিক থেরাপি বা কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে পরিবার শেখে কীভাবে মাকে সহায়তা করতে হবে, তার চাপ কমাতে হবে এবং শিশুর যত্নে সাহায্য করতে হবে। পরিবার যেন বোঝে মা অসুস্থ নন, বরং তার সমর্থনের প্রয়োজন।
প্রসবোত্তর বিষণ্নতা কোনো ক্ষণস্থায়ী সমস্যা নয়; এটি মা, শিশু এবং পরিবারের সার্বিক সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশে এ সমস্যার প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য হলেও এখনো এটি পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে না।
কাউন্সিলিং মায়ের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে, মানসিক চাপ কমায় এবং পরিবারের মধ্যে বোঝাপড়া ও স্নেহমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটি পরিবার, বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং একাকীত্ব কমায়। একই সাথে পরিবার এবং বন্ধুদের সমর্থনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি ভালোবাসা এবং সাহায্য দেখায়, মা আরও দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন।
প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধও ব্যবহার করা যায়, কিন্তু সব সময় মনোযোগ দিতে হবে যে, এটি শিশুর স্তন্যদানে নিরাপদ। এছাড়া সহজ কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া, সুষম খাদ্য গ্রহণ, হালকা হাঁটা বা ব্যায়াম এবং নিজের জন্য কিছু সময় রাখা মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।
বাংলাদেশে করণীয়
বাংলাদেশে প্রসবোত্তর বিষণ্নতা মোকাবিলার জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
প্রথমত, স্বাস্থ্য নীতি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে দেশের সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবোত্তর মায়েদের নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। স্ক্রিনিংয়ের জন্য Edinburgh Postnatal Depression Scale (EPDS) বা অন্যান্য মনোবৈজ্ঞানিক পরিমাপণ বাংলায় ব্যবহার করা যেতে পারে, যা সহজে মায়েদের মানসিক অবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করবে।
দ্বিতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী ও কাউন্সিলরের সংখ্যা বৃদ্ধি। জেলা ও উপজেলায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং কাউন্সিলর থাকা দরকার, যাতে প্রাথমিক স্তর থেকেই মায়েদের সহায়তা প্রদান করা যায়। পাশাপাশি, গৃহমুখী মা ও গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মীদের (Community Health Workers) প্রশিক্ষণ দিলে তারা প্রাথমিক স্ক্রিনিং করতে সক্ষম হবেন।
তৃতীয়ত, সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রচারণা। গণমাধ্যম যেমন টেলিভিশন, রেডিও, সোশ্যাল মিডিয়া এবং কমিউনিটি কেন্দ্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বোঝানো দরকার যে, প্রসবোত্তর বিষণ্নতা একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা, লজ্জার বিষয় নয়। পরিবার এবং সমাজের সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করা হলে মায়েরা সময়মতো সাহায্য গ্রহণ করতে পারবেন।
চতুর্থত, সাপোর্ট সার্ভিস ও হেল্পলাইন চালু। মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইন সহজলভ্য করা হলে, প্রয়োজনে মা ও পরিবারের সদস্যরা অনলাইন বা ফোনের মাধ্যমে সরাসরি কাউন্সিলিং পেতে পারবেন। এটি বিশেষ করে দূরবর্তী গ্রামীণ অঞ্চলে খুবই কার্যকর হতে পারে।
অবশেষে, গবেষণা ও নীতিনির্ধারণ। দেশের বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রসবোত্তর বিষণ্নতার প্রাদুর্ভাব, চিকিৎসার চ্যালেঞ্জ এবং প্রয়োজনীয় সমাধান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা উচিত। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যনীতি তৈরি এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে মাতৃস্বাস্থ্যের মূল অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। এসব উদ্যোগ একসাথে কার্যকর হলে, মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ এবং পরিবারের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
প্রসবোত্তর বিষণ্নতা কোনো ক্ষণস্থায়ী সমস্যা নয়; এটি মা, শিশু এবং পরিবারের সার্বিক সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশে এ সমস্যার প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য হলেও এখনো এটি পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে না। সামাজিক সমর্থন, সচেতনতা, এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতার মাধ্যমে প্রসবোত্তর বিষণ্নতা অনেকাংশে প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সম্ভব। তাই সময় এসেছে পরিবার, সমাজ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একত্রে কাজ করার, যাতে প্রতিটি মা একটি সুস্থ ও পরিপূর্ণ মাতৃত্ব উপভোগ করতে পারেন।
ড. জেসান আরা : সহযোগী অধ্যাপক ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
jesan@ru.ac.bd