ছবি : সংগৃহীত

নিকোলা টেসলা (Nikola Tesla) একজন সার্বিয়ান আমেরিকান। তিনি উদ্ভাবক, তড়িৎ প্রকৌশলী, যন্ত্র প্রকৌশলী এবং ভবিষ্যবাদী; যিনি আধুনিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ ও তারবিহীন তড়িৎ পরিবহন ব্যবস্থা আবিষ্কারের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।

১৮৫৬ সালের ১০ জুলাইয়ে তার জন্ম। স্মিলিয়ান, অস্ট্রিয় সাম্রাজ্যে (বর্তমান ক্রোয়েশিয়া) তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই তার স্কুল কলেজ। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান আমেরিকায়। আমেরিকাতে গিয়ে হয়ে যান আমেরিকান।

১৯২৬ সালে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যখন বেতার পুরোপুরি প্রয়োগ করা শুরু হবে তখন সমগ্র পৃথিবী একটি বিশাল মস্তিষ্ক রূপে রূপান্তরিত হবে। আমরা একে অপরের সাথে যত দূরেই থাকি না কেন মুহূর্তের মধ্যেই যোগাযোগ করতে সক্ষম হব। শুধু এই টেলিভিশন ও টেলিফোনের মাধ্যমে হাজার হাজার মাইলের মধ্যবর্তী দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও আমরা এমনভাবে একে অপরকে দেখতে ও শুনতে পাব যেন আমরা মুখোমুখি হয়ে দেখছি ও কথা বলছি। আমাদের বর্তমান টেলিফোন ব্যবস্থা একদিন এমন হবে যে, আমরা একে পকেটে বহন করতে সক্ষম হব।’

সত্যি বলতে কি, উনি আজকের স্মার্ট ফোনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। একজন বিজ্ঞানী কতটা দূরদর্শী হলে ১৯২৬ সালে বসে আজকের প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কথা ভাবতে পারে? আমিতো ১৯৯৬ সালেও এমন কথা ভাবতে পারিনি।

মেঘনাদ সাহা অনেক বড়মাপের একজন বিজ্ঞানী। তার নামে, তার জন্মস্থান গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বড় একটা ইন্সটিটিউট করা যেত। এইসব করলে আমাদেরই লাভ হতো। আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানতো এই দেশের মাটিতে জন্মে, এইখানে বড় হয়েও বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হওয়া যায়।

নিকোলা টেসলা ৮টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন এবং ৩০০টির মতো পেটেন্ট ছিল তার। যদিও তিনি বাবা-মায়ের সূত্রে সার্বিয়ান কিন্তু সার্বিয়ার সাথে তার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ সার্বিয়ায় পা দেওয়া মাত্রই নিকোলা টেসলা নামের সাথে প্রথম পরিচয় ঘটবে। ওদের একটি মাত্র ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। সেটিও কোনো রাজনীতিবিদ বা অন্য কারো নামে নয়। সেটার নাম বেলগ্রেড নিকোলা টেসলা এয়ারপোর্ট (Belgrade Nikola Tesla Airport)।

সত্যি বলতে কি, শুধু এয়ারপোর্ট না। সার্বিয়ার সব জায়গায় টেসলার নাম ছড়িয়ে আছে। বেলগ্রেড শহরের নানা জায়গায় পাওয়া যাবে টেসলার ভাস্কর্য। সার্বিয়ান মুদ্রাতেও নিকোলা টেসলার ছবি আছে। সার্বিয়ান ছেলেমেয়েরা প্রায় সবাই টেসলার আত্মজীবনী পড়ে বলে এটি আজও বেস্টসেলার।

আমাদের বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসু। আমাদের ছোটবেলার বইয়ে তার উপর লেখা ছিল। গাছের যে প্রাণ আছে এইটা তিনিই সর্বপ্রথম প্রমাণ করেছিলেন। এছাড়া তিনি রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন। যদিও আবিষ্কারের স্বীকৃতি পাননি।

আমাদের বাংলাদেশে জন্মেছিলেন মেঘনাদ সাহা। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে গিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষের সহপাঠী হন।

আমাদের অমর্ত্য সেন ছিলেন। তিনি পুরান ঢাকার সেইন্ট গ্রেগরী স্কুলে পড়েছিলেন তারপর কলকাতায় চলে যান। চলে গেলেই কি আমাদের থেকে দূরে সরে যাবেন?

আমরা এমন একটা জাতি যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কোথাও বিজ্ঞানীদের নামে কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বিজ্ঞানীদের নামে নেই বললেই চলে। এই দেশের যাবতীয় সবকিছু রাজনীতিবিদদের নামে। তাহলে বিজ্ঞানী জন্মাবে কীভাবে?

নিকোলা টেসলাতো সার্বিয়াতেও জন্মাননি। তবুও তো সার্বিয়ানরা তাকে সার্বিয়ান হিসেবেই স্মরণ করে, শ্রদ্ধা করে। আশ্চর্য কি জানেন? বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়ে স্থায়ী হলেও তাদেরকে আমাদের ভাবতে অসুবিধা নেই কিন্তু ভারতে গেলেই আমাদের থেকে বিয়োগ হয়ে যান। অথচ আমরা তাদের নিজেদের বলে দাবি করতে পারতাম। তাদের নামে ভাস্কর্য হতে পারতো, ইন্সটিটিউট হতে পারতো। কিন্তু আমরা কিছুই করিনি।

মেঘনাদ সাহা অনেক বড়মাপের একজন বিজ্ঞানী। তার নামে, তার জন্মস্থান গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বড় একটা ইন্সটিটিউট করা যেত। এইসব করলে আমাদেরই লাভ হতো। আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানতো এই দেশের মাটিতে জন্মে, এইখানে বড় হয়েও বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হওয়া যায়।

আমরা এমন একটা জাতি যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কোথাও বিজ্ঞানীদের নামে কিছু নেই। স্কুলের পাঠ্যবইতে বিজ্ঞানীদের জীবনীর বিস্তৃত রূপ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বিজ্ঞানীদের নামে নেই বললেই চলে। এই দেশের যাবতীয় সবকিছু রাজনীতিবিদদের নামে। তাহলে বিজ্ঞানী জন্মাবে কীভাবে?

আমার জীবদ্দশাতেই জামাল নজরুল ইসলামকে পেয়েছিলাম। তিনি মারা গেছেন। উনার নামেও কিছু একটা হতে পারতো। ভারতের কলকাতাতেই আছে মেঘনাদ সাহার নামে প্রতিষ্ঠান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষের নামে প্রতিষ্ঠান আছে। অথচ আমাদের দেশে কিছুই নেই। তবে কি আমরা সত্যিই গুণীর পূজারি নই?

ড. কামরুল হাসান মামুন ।। অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়