পারলে প্রমাণ করুন আলজাজিরার প্রতিবেদন মিথ্যা : বিএনপি
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরায় বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে প্রচারিত প্রতিবেদনটি মিথ্যা প্রমাণ করতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিএনপি।
দলটির নেতারা বলছেন, স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তীর বছরে বাংলাদেশ মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে চলে এটা আমরা শুনতে চাই না। সরকারকে বলবো মিথ্যা গালগল্প না করে পারলে প্রমাণ করুন আলজাজিরার রিপোর্ট মিথ্যা। আপনারা যদি আলজাজিরার রিপোর্ট মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে বিএনপি আপনাদের সহযোগিতা করবে। সরকারের পাশে থাকবে।
বিজ্ঞাপন
আজ (সোমবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দি জীবনের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে তার মুক্তির দাবিতে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি।
প্রতিবাদ সমাবেশ উপলক্ষে বেলা ১১টা থেকে প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা দলটির নেতাকর্মীরা দখল নিয়ে নেন। এ সময় রাস্তায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ ঘিরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। তবে এই সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এটা স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তীর বছর। আমি স্মরণ করছি স্বাধীনতা ঘোষক জিয়াউর রহমানকে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এই জন্য মুক্তিযুদ্ধ করি নাই যে বাংলাদেশ মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে চলবে, দেশ একটি মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আমরা এই সরকারকে বলতে চাই, প্রমাণ করুন আলজাজিরার রিপোর্ট মিথ্যা। একটা মন্ত্রী আছে, আমি তার নাম মুখে নিতে চাই না, তিনি বলেছেন মামলা করবেন। আরে মিয়া যা পারবেন না, তা নিয়ে টানাটানি করেন কেন। এসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে পারলে এই রিপোর্ট মিথ্যা প্রমাণ করুন। মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে বিএনপি আপনাদের পাশে থাকবে।’
অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করে মির্জা আব্বাস বলেন, তাকে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগে সাজা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা এখন লভ্যাংশসহ ব্যাংকে ৮ কোটি টাকা হয়েছে। তাই আমার জিজ্ঞাসা ২ কোটির টাকার মিথ্যা অভিযোগে যদি তারা সাজা হয়, তাহলে ৮ কোটি টাকার জন্য কী পুরস্কার পাবেন তিনি।
শর্ত সাপেক্ষ মুক্ত খালেদা জিয়া এখনও কারাবন্দি বলে দাবি করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানক বলেত চাই, আমরা সংগঠন গুছিয়ে নিচ্ছি। তারপর মাঠে নামবো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।
১/১১ সরকারের সময় কারগারে একই রুমে আওয়ামী লীগের নেতা ওবায়দুল কাদের, শেখ সেলিম, সালমান এফ রহমানের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞাতা তুলে ধরেন মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা সবাই একটা জায়গায় ছিলাম। তারা সবাই বিভিন্ন মামলায় বন্দি ছিলেন। এখন ওবায়দুল কাদের ঘরের মধ্যে থেকে দামি-দামি ঘড়ি পরেন, বড় বড় মিথ্যা কথা বলেন। ১/১১ সরকারের সময় তিনি বলেছিলেন এবার ছাড়া পেলে আমি আর রাজনীতি করবো না। এই কথা তিনি নিজেই আমাকে বলেছেন। আমি সাক্ষী দেবো।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১/১১ সরকারের সময় হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আর আমাদের নামে থাকা মামলাগুলো সচল রেখেছে। আমাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। সেই রকম একটি মিথ্যা মামলায় আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকেও সাজা দেওয়া হয়েছে।
আল জাজিরার রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, তথ্য প্রমাণ করুন রিপোর্ট মিথ্যা। সরকার ভয় পায় এমন কাজ করতে। কথা বলে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না বলে উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, কথা নয়, কাজ করতে হবে। আমাদের রাজপথ দখল নিতে হবে। খালেদা জিয়াকে তার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন গয়েশ্বর।
অনুষ্ঠানে এক পর্যায়ে অসুস্থ বোধ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পরে তাকে প্রেসক্লাব থেকে কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলেও জানানো হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।
এএইচআর/এনএফ