মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে স্থবির ঢাবি ছাত্রদলের কার্যক্রম
ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা আহ্বায়ক কমিটির। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ মাস ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে কোনো ধরনের সাংগঠনিক তৎপরতা ছাড়াই চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির পদ-প্রত্যাশীদের মধ্যে।
২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে আহ্বায়ক এবং মো. আমানউল্লাহ আমানকে সদস্য সচিব করে ৯১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। যা পরে বাড়িয়ে ১২৩ সদস্য করা হয়। এ আহ্বায়ক কমিটি ইতোমধ্যে ১৩ মাস পার করেছে।
বিজ্ঞাপন
সাংগঠনিক কমিটির বৈধতা এবং আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রশ্ন তুলে কমিটি ভেঙে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবি আহ্বায়ক কমিটির একাংশের।
গত বছরের ২১ মার্চ করোনার মধ্যে ছেলেদের ১২টি হলে কমিটি ঘোষণা হলেও এখনো পর্যন্ত সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের কমিটি দিতে পারেনি রাকিব-আমান কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি না হওয়ার পেছনে এটিও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন পদ-প্রত্যাশীরা। আর এ জন্য বর্তমান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে দায়ী করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিভক্ত দুটি পক্ষ। যা প্রকাশ্যে আসে গত বছরের ১ ডিসেম্বর। রাজধানীর মোগলটুলীতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে আলাদা আলাদা বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। যাতে একটি অংশের নেতৃত্ব দেন রাকিব-আমান, অন্য একটি অংশের নেতৃত্ব দেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন এবং এইচ এম আবু জাফর। তাছাড়াও ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসেও আলাদা কর্মসূচি পালন করার কথা জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ প্রত্যাশী শাখার বর্তমান জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন বলেন, ১৩ মাস পার হলেও সংগঠন কোনো সাধারণ সভা করেননি, জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে গেছেন। তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ও সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা তাদের এসব কর্মকাণ্ড অবশ্যই সংগঠনের শৃঙ্খলার পরিপন্থী। আমরা এ কমিটি ভেঙে দিয়ে সংগঠনকে গতিশীল করতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি চাই।
আরেক পদপ্রত্যাশী বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক ও এসএম হল শাখার সদস্য সচিব এইচ এম আবু জাফর ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি ১৩ মাস হয়ে গেছে। আমরা চাই সবাইকে সমন্বয়ের মাধ্যমে, যারা ত্যাগী এবং যোগ্য তাদের মধ্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, কমিটি হওয়ার পর আমরা আহ্বায়ক কমিটিকে বর্ধিত এবং হল কমিটি দিয়েছি, শুধুমাত্র এসএম হল ছাড়া। ক্যাম্পাসভিত্তিক কার্যক্রমগুলোও আমরা করেছি। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ১৭ মাস চলে। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে ঢাকা শহরের যেসব কমিটি দেওয়া হয়নি সেগুলো দিয়ে দেবে। তারপর ফেব্রুয়ারিতে এসএম হল কমিটি এবং তারপর বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি দেবে।
বাকি হলগুলোর কমিটি হলেও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের কমিটি কেন হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শেষ ৪-৫ মাস এসএম হল কমিটি দেওয়ার জন্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে মিটিং হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় সংসদ। আমাদের সদিচ্ছার অভাব নেই, আমরা কমিটি দিতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মেলন করতে পারিনি। ক্যাম্পাস খোলার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি দিয়ে দেব।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল কমিটি এবং আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে বিভাজনের বিষয়ে তিনি বলেন, ছেলেদের বাকি ১২টা হলে কমিটি হলেও, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের কমিটি কেন্দ্রীয় সেলে জমা দেয়নি আহ্বায়ক কমিটি। জমা না দিলে আমরা কিভাবে দেব, তবে শিগগিরই কমিটিটা দিয়ে দেব। আর রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব-বিভাজন থাকা স্বাভাবিক, দলের স্বার্থে আমরা সবাই এক।
এসএম