সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর শোক
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। একই সঙ্গে এ ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তারা।
রোববার (৫ জুন) রাজনৈতিক দলগুলো পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এ শোক জানান।
বিজ্ঞাপন
বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত ও আহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। যৌথ শোকবার্তায় তারা বলেন, অগ্নিদগ্ধ ও আহতদের জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বিস্ফোরণে হতাহতদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। দুর্ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এক শোক বার্তায় গণফোরামের একাংশের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি ৪০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ৪ শতাধিক। ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সহায়তায় উদ্ধার ও আগুন নেভানোর তৎপরতা চলছে তবুও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। অবিলম্বে সেনাবাহিনীসহ স্পেশাল ফোর্স ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক টিম নিয়োগ করা হোক।
বিজ্ঞাপন
যাদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সভাপতি বদরুদ্দোজা সুজা ও মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের এক শোক বার্তায় বলেন, আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে বিশেষ কিছু দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের অসহায়ত্ব লক্ষণীয়। এর আগে নিমতলী, চুড়িহাট্টা, বনানীর এফআর টাওয়ার ট্রাজেডিসহ বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে যেমন আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব হয়েছে অপরদিকে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তারা আরও বলেন, নিমতলী ট্রাজেডির একযুগ পেরিয়ে গেলেও ফায়ার সার্ভিস আধুনিক সরঞ্জামাদিতে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় তা কন্টেইনার ডিপোর অগ্নি দুর্ঘটনা আবারো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। দ্রুততম সময়ে অগ্নি নির্বাপণে অক্ষম জাতিকে সিঙ্গাপুরের স্বপ্ন দেখানো আর ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা একই কথা।
বিস্ফোরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তারা বলেন, রাসায়নিক পণ্যের কন্টেইনার আলাদা রাখা ও থাকার কথা; কিন্তু কত রাসায়নিক কন্টেইনার সেখানে মজুত ছিল তা কেউ বলতে পারছে না। আগুন লাগার পর একের পর এক রাসায়নিক কন্টেইনারের বিকট বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু হলে বহু দূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের প্রাণহানি ও কয়েকশ শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আবারও শ্রমিকের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতের বিষয়ে অবহেলা প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ হলো।
নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতের দায়িত্বে নিয়োজিত পরিদর্শন কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে এনে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন দলটির শীর্ষ এই দুই নেতা।
নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত নগদ সাহায্য ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জাতির সম্মুখে প্রকাশ করার আহ্বান জানান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা।
বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ এ ঘটনায় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিস্ফোরক, দাহ্য পদার্থ, কেমিক্যালস ও গার্মেন্টস পণ্য একসঙ্গে না রাখার যে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল এ ক্ষেত্রে তা মেনে চলা হয়নি। ফলে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। মালিক পক্ষ ও সরকার কোনোভাবেই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।
দায়িত্বে অবহেলার জন্য মালিক ও কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করে তিনি আরও বলেন, নিহত ও আহতদের পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
এএইচআর/ওএফ