প্রেসক্লাবে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার বক্তব্য শুনে মঞ্চের দর্শকসারিতে থাকা নেতারা স্লোগান দিলে তাদের ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘উত্তর-দক্ষিণ স্লোগান নয়, স্লোগান হবে স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক। এবার সরাসরি বলতে হবে, এই স্বৈরাচার সরকার নিপাত যাক। স্লোগান ঘরের মধ্যে না দিয়ে বাইরে গিয়ে দিও।’

রোববার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীতে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চ তো একটা দিন। ২৬ মার্চ আরেকটা দিন। কিন্তু এর আগে দীর্ঘকাল ধরে এই দেশের মানুষ স্বাধীকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। এই যুদ্ধ এক-দুই-তিন দিনের নয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এই দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। পাকিস্তান হওয়ার পর থেকে তাদের বৈষম্যমূলক চিন্তা-ভাবনা বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে রুখে দাঁড়িয়েছেন আমাদের ছাত্ররা। এভাবে দেশের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণরা তাদের অধিকারের জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই ইতিহাসগুলো থেকে বঞ্চিত করে একটা ভ্রান্ত ইতিহাস দিচ্ছে। একটা ধারণা দিচ্ছে, একটি মাত্র দল, এক ব্যক্তি, একটাই গোষ্ঠী এই দেশের সবকিছু এনে দিয়েছে। সব স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আমরা সত্যটা তুলে ধরতে চাই। কারা কারা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছেন, সংগ্রাম করেছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীর প্রোগ্রামগুলো হাতে নেওয়ার পরে অনেকে নাম নিয়ে, আবার অনেকে নাম না দিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। আমি তাদেরকে বলতে চাই, এই ঘটনাগুলো ৫০ বছর আগে ঘটেছে। আজকের যারা তরুণ প্রজন্ম, তাদের প্রকৃত ইতিহাস জানার অধিকার রয়েছে। আজকে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে সত্যকে সম্পূর্ণভাবে একটা দলীয় ঘটনা বলে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে এই দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং দায়িত্বশীল দল হিসেবে ও স্বাধীনতার ঘোষকের দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব মনে করেছি, মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার যে ইতিহাস তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলা ধরা।’

স্বাধীনতা কি একা আওয়ামী লীগের? প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা কি কোনো ব্যক্তির? স্বাধীনতা সমগ্র দেশের। এই স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে, আমাদের হাজার-হাজার তরুণ, যুবক, কৃষক, ছাত্র-ছাত্রী। এই স্বাধীনতার আমাদের মা-বোনেরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। সুতরাং এটাকে ধরে স্বাধীনতার যে ইতিহাস সেটাকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বিএনপি এই প্রোগ্রামগুলো হাতে নিয়েছে।’

‘আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নাম একবারও উচ্চারণ করেন না’ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমনকি সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নামও উচ্চারণ করেন না। শুধু তাই নয় যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের নামও উচ্চারণ করেন না। এরা কত সংকীর্ণ, এরা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, এক জন মানুষ ও পরিবারকে মহিমান্বিত করার জন্য মিথ্যা ইতিহাস এই দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সে জন্য আমরা একেকদিন একেক বিষয়ের ওপর প্রোগ্রাম করে সত্য ইতিহাস তুলে ধরার উদ্যেগ নিয়েছি।’

‘যুদ্ধ আর সংগ্রামের মধ্যে একটা সম্পর্ক অবশ্যই রয়েছে’ বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিন্তু সংগ্রাম আর যুদ্ধ এক নয়। তাই উচ্চারণ করা প্রয়োজন শেরে বাংলার কথা, সোহরাওয়ার্দীর কথা, আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কথা, শেখ মুজিবুর রহমানের কথা, অলি আহাদ হোসেনের কথা। এই রকম অসংখ্য মানুষ আছে, যারা এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আর জিয়াউর রহমানের ঘোষণা মানুষকে যুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে, সবার অবদানকে দূরে সরিয়ে রেখে একমাত্র এক নেতারা এক দেশে, শেখ মুজিবের বাংলাদেশে প্রচার করা। এই স্লোগান এখন না, ৭১ সালের পর থেকে তারা এই স্লোগান শুরু করেছে। এখন যখন আল-জাজিরা আসে অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মে, তো সবকিছু তো একজনেই। তারা আজকে এই দেশের সব আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বেইমানি করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপির দায়িত্ব হচ্ছে, মিথ্যা ইতিহাসকে পরিবর্তন করে সত্যকে তুলে ধরা।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগ বড় গলায় বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না। এটার প্রয়োজনীয়তা আছে। এটা প্রধানমন্ত্রী বলেছে। আপনার নিজেকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা আছে। আপনার অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, বেআইনি সব কর্মকাণ্ডকে রক্ষা করার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছেন।’

‘আওয়ামী লীগ দাবি করে, তারা গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচারের বিশ্বাস করে’ উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘সে দিনও বলেছে, কেউ মারা গেলে আমরা কী করবো? আদালত তার কাজ করুক। অথচ গণতন্ত্রের জন্য যিনি ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন, সেই খালেদা জিয়াকে একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে সম্পূর্ণ সাজিয়ে তাকে সাজা দিয়েছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে তাদেরকে সাজা দিচ্ছে। তারা হাজার-হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি-লোপাট করছে। সিআইডির চার হাজার পৃষ্ঠার যে রিপোর্ট সেখানে বলা হয়েছে, তাদের আত্মীয়-স্বজনরাই হাজার কোটি টাকা লোপাটের সঙ্গে জড়িত। এটা তো একটা ছোট ঘটনা। এ রকম কত হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, তা হিসাবের মধ্যেই নেই। বিএনপির কোনো গন্ধ পেলে তার চাকরি হয় না। একদিন কি এর হিসাব দিতে হবে না?’

‘বিএনপি অনেক বড় কাজে হাত দিয়েছে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেটা হচ্ছে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের তার মর্যাদা সম্পূর্ণভাবে স্থাপিত করা, তার খেতাব লাগে না, তিনি প্রত্যেকের হৃদয়ে আছেন। ইতিহাস তাকে ধারণ করেছে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরেয়ে আনা। ইতোমধ্যে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে তারেক রহমান দেশে আসছেন।’

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম প্রমুখ।

এএইচআর/এফআর