সর্বক্ষেত্রে সফল ছিলেন মওদুদ
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদের ভায়রা ভাই ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, মওদুদ আহমদ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী হিসেবে ছাড়াও জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফল ছিলেন। ভিন্ন আদর্শের রাজনীতি করলেও আমাদের মধ্যে কখনও হৃদ্যতার ঘাটতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) গুলশানে মওদুদ আহমদের বাসভবনে তার মরদেহ দেখতে এসে স্মৃতিচারণ করে এসব কথা বলেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, মওদুদ আহমদ কখনও মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন না। অত্যন্ত মিষ্টভাষী লোক ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মওদুদ আহমদের মরদেহ নিয়ে আসা হয় গুলশানের বাসভবনে।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী মওদুদ আহমদকে নিয়ে শোকবইয়ে মির্জা ফখরুল লেখেন, আমি আমার প্রিয় বড় ভাইকে হারালাম। যিনি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, শুক্রবার (১৯ মার্চ) মরহুমের মরদেহ সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সেখান থেকে নেওয়া হবে মওদুদের জন্মস্থান নোয়াখালীতে। দুপুর আড়াইটায় নোয়াখালীর কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও জানান, বিকেল ৪টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে চতুর্থ জানাজা এবং সাড়ে ৫টায় মরহুমের নিজ বাড়ির (মানিকপুর কোম্পানিগঞ্জ) সামনে পঞ্চম জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।
মওদুদ আহমদের জানাজায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও ধর্মপ্রাণ সকলকে অংশগ্রহণ করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানান টিপু।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মওদুদ আহমেদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
একনজরে মওদুদ আহমদ
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে সম্মান পাস করে ব্রিটেনের লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশোনা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত ছিলেন।
১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহূত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন।
১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী-৬ আসন) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেবার তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬-তে তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন।
৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাঁচবার মওদুদ আহমদ নোয়াখালী-৫ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও জিয়াউর রহমানকে বিএনপি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন মওদুদ আহমদ। দলটির তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মওদুদ আহমদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সংগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি সর্বশেষ ২০০৯ সালে খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।
২০১৫ সালে মওদুদ আহমেদের একমাত্র ছেলে আমান মমতাজ মওদুদ মারা যান। আর মওদুদ আহমদের একমাত্র মেয়ে বর্তমানে নরওয়েতে থাকেন।
এএইচআর/এইচকে