ঢাকার রাস্তায় আতঙ্ক, গাড়ি অল্প বন্ধ দোকানপাট
ছবি- এসআই রাজ
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। সকাল থেকেই স্লোগানে স্লোগানে সমাবেশস্থলে আসছেন নেতাকর্মীরা। ছুটির দিন ও সমাবেশ একসঙ্গে হওয়ার কারণে শহরজুড়ে এক ধরনের থমথমে ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সমাবেশস্থল ও এর আশপাশ ব্যতীত অধিকাংশ রাস্তা ফাঁকা দেখা গেছে। হাতেগোনা কয়েকটি গণপরিবহন ছাড়া রাস্তায় তেমন গাড়িও দেখা যায়নি। এমনকি প্রধান সড়কের পাশে অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর বাড্ডা থেকে নয়াপল্টন পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা দলে দলে স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থল পল্টনের দিকে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে রাস্তায় তেমন গণপরিবহন দেখা যায়নি। এছাড়া ব্যক্তিগত যানবাহন নেই বললেই চলে। তবে মালিবাগ থেকে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। মালিবাগ মোড় থেকে হাতেগোনা যে কয়েকটি গণপরিবহন চলাচল করছে সেগুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া মালিবাগ থেকে পল্টন ও এর আশেপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি আনসার বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন তারা।
বাড্ডা থেকে পল্টন পর্যন্ত প্রধান সড়কে সরেজমিনে আরও দেখা যায়, এই রাস্তার পাশের অধিকাংশ দোকান বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সাধারণত দোকানপাট বন্ধ থাকে। তবে আজ রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দোকান বন্ধের প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
এবিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ ঢাকায় দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ। এই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ভাঙচুর হতে পারে- এমন আশঙ্কায় তারা দোকান পার্ট বন্ধ রেখেছেন আজ।
রামপুরা আবুল হোটেলের রাস্তার গলিতে মুদির দোকান চালান মো.ইলিয়াস। তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুই ঘণ্টার জন্য দোকান খুলেছি। পরে দেখি কোনো কাস্টমার নাই। এছাড়া ১০টার দিকে রাস্তায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পরে ভাঙচুরের ভয়ে দোকান বন্ধ করে ফেলি।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় প্রতিদিন সিংগাড়ার ভাসমান দোকান নিয়ে বসেন মো.সুজন। কিন্তু রাস্তায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড ভিড় থাকায় আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে চলে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় এ সিংগাড়া বিক্রেতার।
তিনি বলেন, রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ। দোকান নিয়ে বসার কোনো জায়গা নেই। এছাড়া কখন কী ঘটে এই ভয়ে আজ দোকান বন্ধ।
এদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বাস চালকরাও আজ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামতে ভয় পাচ্ছেন। সকালে থেকে কিছু গণপরিবহনের বাস চললেও দুপুর থেকে সেই সংখ্যা অনেক কম।
এ বিষয়ে চাষাড়া থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলাচল করা গ্রিন অনাবিল পরিবহনের চালক কামাল হোসেন বলেন, সকালে একটা ট্রিপ দিছি। কিন্তু এখন মালিবাগ থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে। আর ভয় লাগছে কখন ভাঙচুর হয়। এজন্য গাড়ি নিয়ে গাজীপুর চলে যাচ্ছি। সমাবেশ শেষ হলে আসব।
কোথায়, কখন বিরোধীদের সমাবেশ
শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে শুক্রবার (২৮ জুলাই) বেলা ২টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির মহাসমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির পাশাপাশি দলটির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ৬ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ বেলা ৩টায় মৎস্য ভবনের সামনে সমাবেশ করবে। এতে জোটের শীর্ষ নেতা আ.স.ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক ও জুনায়েদ সাকি বক্তব্য রাখবেন।
এদিন বেলা ৩টায় কালভার্ট রোড কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। একই সময়ে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বেলা ৩টায় গণফোরাম ও পিপলস পার্টির যৌথ উদ্যোগে মতিঝিল নটরডেম কলেজের উল্টো দিকে গণফোরাম চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
একইদিন বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রেজা কিবরিয়াপন্থি গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে সমাবেশ। এছাড়া অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির উদ্যোগে বেলা ৩টায় কাওরান বাজার এফডিসি সংলগ্ন দলের অফিসের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান ইরাণের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি বেলা সাড়ে ৩টায় বিজয় নগর পানির ট্যাংকির সামনে সমাবেশ করবে। এনডিএম বেলা ৩টার দিকে মালিবাগ মোড় হোসাফ টাওয়ার, জাতীয়তা সমমনা পেশাজীবী জোট সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে।
এমএসি/এমজে