যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণার সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, জনমানুষের সমর্থন নিয়েই গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। যতই ষড়যন্ত্র করেন, আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্মুখী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে।

তারা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন বানচালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচনে বাধা দিতে আসলে তা প্রতিহত করা হবে।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে’ বক্তারা এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে ও বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিরোধে যে প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করা হয়েছে, আমি তার সঙ্গে একমত। একটাই কথা, দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে আমরা শান্তি এবং উন্নয়ন-অগ্রগতি ও প্রগতির পথে নিয়ে যেতে চাই। এজন্য বার বার দরকার শেখ হাসিনার সরকার। আগামী দিনে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় এনে এই স্লোগানকে আমরা বাস্তবায়ন করব।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সমর্থন দেয়নি, যারা সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল, পাক বাহিনীকে যারা অস্ত্র দিয়েছিল, তাদের মোকাবিলা করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা পরাজিত হইনি। আজকেও বলতে চাই, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ, কিছু নেতা যারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, নানা রকম কৌশল করছেন, তাদের কাছে আমরা বলতে চাই, একাত্তরে আমরা পরাজিত হইনি। ওই নৌ-বহরের হুমকিতে আমরা পালিয়ে যাইনি। আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করে, অতীতেও আমরা ব্যর্থ হইনি, আগামীতেও হব না।

ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে। এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। কীসের ভয় দেখান? গত ১৫ বছর দেখেছি আপনাদের। আন্দোলন করবেন, শেখ হাসিনাকে হটাবেন। এক ইঞ্চিও নড়াতে পারেননি। আর আছে মাত্র তিন মাস। এই সময়ে আমরা রাজপথ পাহারা দেব। যদি কোনো সন্ত্রাস করেন, অগ্নিসংযোগ করেন, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেন, রাজপথে মোকাবিলা করব।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ষড়যন্ত্র চলছে। একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘাতক ও তাদের বিদেশি মদদ দাতারা একাত্ম হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। স্যাংশনের কথা বলে, ভিসা নীতির কথা বলে তারা আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে ক্ষমতার পরিবর্তন করতে চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায়।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এই পিচ্ছিল পথে আবার নির্বাচন এসেছে। আবার জামায়াত-বিএনপি সোচ্চার হয়েছে। তারা জানে না, আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। বিএনপি-জামায়াত আপনারা যতই উৎফুল্ল হন, আপনারাও এই ফাঁদে পড়বেন। তাই বলি, নির্বাচনে আসুন।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। এ কারণে আমাদের সদা সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কখনও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় থাকেনি, ক্ষমতায় যায়নি। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। নির্বাচনই জনসমর্থনের ভিত্তি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। আজ যে দলটি চোখ রাঙিয়ে আমাদের ভয় দেখাতে চায়, তারা কেন বোঝে না, যে দলকে হুমকি দেয়, সেই দলের নাম আওয়ামী লীগ। সেই দলের নেতা শেখ হাসিনা। আর এই দলের জনক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ। এই রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ কোনো দেশের ভিসানীতি সম্মানজনক নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। যারা বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায়, তাদের সেই চাওয়া আর আমাদের চাওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারা উদ্বিগ্ন হবেই।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, লাশের রাজনীতি কায়েম করে, সাম্রাজ্যবাদীদের তল্পিবাহক হিসেবে বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়, ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়, আমাদের জীবন থাকতে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে এটা করতে দেব না। নির্বাচনে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তাদের প্রতিহত করা হবে। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির। এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আলম রুহুল, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি কামরুল হাসান মিলন, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

এমএসআই/এসকেডি