চট্টগ্রামে চলছে ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙা-গড়ার খেলা
মধ্যরাতে নিজেদের আওতাধীন ছয়টি ইউনিটে কমিটি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। পরদিন সেখান থেকে চারটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় দক্ষিণ জেলা ইউনিটের কমিটিও। এভাবে কমিটি ভাঙা-গড়ার খেলা নিয়ে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে হঠাৎ একের পর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে থাকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি। প্রথমে বিভিন্ন কমিটি ভেঙে দিয়ে তারপর ছয়টি ইউনিটে কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ভাঙা সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলোর তারিখ দেওয়া হয় ২৬ সেপ্টেম্বর। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহেরের স্বাক্ষর করা একই ধরনের বিজ্ঞপ্তিগুলোতে কিছুক্ষণ পর আবার ২৭ তারিখ লিখে ছয়টি ইউনিটে কমিটি দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভা শাখা, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ শাখা, সরকারি আলাওল কলেজ শাখা এবং বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভা শাখা।
বিজ্ঞাপন
বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে মধ্যরাতে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দেওয়া ছয়টির মধ্যে চারটি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যথাযথ গঠনতান্ত্রিক নিয়ম না মেনে গঠিত হওয়ায় দক্ষিণ জেলার আওতাধীন বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভা, আলাওল সরকারি কলেজ এবং সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
এদিকে, হঠাৎ করে কমিটি গড়া ও ভাঙা নিয়ে চট্টগ্রামজুড়ে আলোচনা চলছে। নেতাদের এমন নাটকীয়তা নিয়ে কারও কারও ছাত্ররাজনীতির ক্যারিয়ার হুমকির মধ্যে পড়েছে। কারণ একদিনের কমিটিতে ঠাঁই হওয়া নেতারা এখন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। যদিও কমিটি ঘোষণার পরপরই নানা ধরনের বিতর্কও উঠেছিল।
কমিটিতে ঠাঁই হওয়া সভাপতি পদমর্যাদার একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতে আমাদের কমিটি ঘোষণা হলো। পরদিন ঢাকা থেকে আমাদের কমিটি বাদ দেওয়া হলো। অনেকদিন রাজনীতি করেছি। এবার একটু স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। এখন এটাই কাল হয়েছে। কারণ একদিনের কমিটিতে ঘোষণা হওয়ায় উল্টো লোকজনের সমালোচনার মুখে পড়েছি।
আরও পড়ুন : মদের বিল চাওয়ায় বারে ভাঙচুর ছাত্রলীগ নেতাদের
ছাত্রলীগের কয়েকজন জানান, নানা কারণে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি নিয়ে বিরক্ত ছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিয়ে করা, টাকা নিয়ে কমিটি দেওয়া, শিবিরসহ অন্যান্য মতাদর্শে বিশ্বাসী ছাত্রদের রাজনীতিতে যুক্ত করাসহ নানা অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে যেকোনো সময়ে কমিটি বিলুপ্ত হতে পারে বলে গুঞ্জন ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গতকাল (মঙ্গলবার) রাতেই জেনে গিয়েছিল তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত ছয়টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু সেখানে বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি নিয়ে বেশি বিতর্ক হয়। এ কারণে পরদিন দক্ষিণ জেলার সঙ্গে সদ্য ঘোষণা দেওয়া চারটি ইউনিটের কমিটিও বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এমআর/এসকেডি