ছাত্র ইউনিয়নে ভাঙনের সুর, জরুরি সম্মেলনের ডাক একাংশের
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ জরুরি জাতীয় সম্মেলনের ডাক দিয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান সভাপতি একে গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয় বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। দুপক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ফলে জরুরি জাতীয় সম্মেলন নিয়ে ভাঙনের সুর বাজছে ছাত্র ইউনিয়নে।
গত বছরের নভেম্বরে ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা ৪০০ কাউন্সিলরে ভোটে ফয়েজ উল্লাহকে সভাপতি ও দীপক শীলকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করে ৪১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তবে নতুন কমিটি গঠনের পরই ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের বিরুদ্ধে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অসহযোগিতা করার অভিযোগ উঠতে থাকে। এবার সংগঠনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা জরুরি জাতীয় সম্মেলন ডেকেছে বলে অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি জাতীয় সম্মেলনের ডাক দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ। রোববার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক তামজিদ হায়দার চঞ্চল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সম্মেলনের কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার অধিকার আদায়, গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতা-সন্ত্রাস-নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী অগ্রণী প্রতিষ্ঠান ছাত্র ইউনিয়নের জরুরি জাতীয় সম্মেলন সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গঠনতান্ত্রিক শূন্যতা ও জরুরি সাংগঠনিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত ২৭ ও ২৮ মার্চ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিজ্ঞাপন
এত বলা হয়, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে এবারের সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলন সফল করতে ইতোমধ্যেই ৭১ সদস্যের প্রস্তুতি পরিষদ ও ১০টি উপ-পরিষদের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিগত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা সারাদেশ থেকে ৪৮টি সাংগঠনিক জেলার দুই শতাধিক প্রতিনিধি জরুরি জাতীয় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে বর্তমান সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, কিছু ত্রুটি বিচ্যুতির কথা উল্লেখ করে আমাদের কয়েকজন সহযোদ্ধা সম্মেলন ডেকেছেন। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক আগেই আমরা সম্মেলনের একটা তারিখ ঠিক করেছিলাম। কিন্তু সেটা এড়িয়ে আমাদের কিছু সহযোদ্ধা বাহিরের শক্তি দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সংগঠনে ভাঙন তৈরির চেষ্টায় লিপ্ত। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কয়েকজন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, রোববার তাদেরকে নিয়েই আমাদের সম্পাদক মণ্ডলীর জরুরি সভা আহ্বান করেছিলাম। কিছু সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। সেই সিদ্ধান্তে তারাও সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলেন। পাশাপাশি সোমবারের সম্মেলন প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে সম্মেলনের বার্তা প্রেরক কেন্দ্রীয় সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক তামজিদ হায়দার চঞ্চল বলেন, সংগঠনের জরুরি পরিস্থিতির এই কারণে কাউন্সিল ডাকা। আর সোমবার কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেবে কাউন্সিল হবে নাকি ঐক্য হবে। এ ব্যাপারে সোমবার কথা বলা ভালো।
এদিকে ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংগঠনে বিদ্যমান সংকট নিরসন ও সংগঠনের ঐক্য সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রোববার কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংগঠনের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো- বিভিন্ন গঠনতান্ত্রিক ব্যত্যয় ও সংগঠনের নীতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন ইউনিটের শাস্তিপ্রাপ্ত সদস্যরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে চলার সংকল্প ব্যক্ত করবে। কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর পত্র প্রদান সাপেক্ষে সম্পাদকমণ্ডলীর কেন্দ্রীয় সভায় উক্ত সদস্যদের শাস্তি প্রত্যাহারে সুপারিশ করবে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তিপ্রাপ্ত সদস্যরা কেন্দ্রীয় সংসদ বরাবর চিঠি প্রদান করেছেন।
বিলুপ্ত সংসদগুলোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সভায় আলোচনা হবে। প্রয়োজনবোধে জরুরি জাতীয় সম্মেলনে এবং বিলুপ্ত ও বর্তমান কমিটির নেতাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
সংগঠনের ঐক্য বিনষ্ট হয়- এ ধরনের কোনো কর্মসূচি সোমবার গ্রহণ করা যাবে না। ঐক্যের স্বার্থে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডাকা সম্মেলনটি বাতিল করতে হবে। আগামী ২৭ এপ্রিল জরুরি জাতীয় সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্পাদকমন্ডলীর পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হবে।
সভায় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ।সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সহ-সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি ফয়জুর মেহেদী, সহ-সভাপতি কেএম মুত্তাকী, সহ-সভাপতি জয় রায়, সহকারী সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান, সহকারী সাধারণ সম্পাদক তামজিদ হায়দার, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, কোষাধ্যক্ষ শামীম হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিএম জুবায়ের প্রধান, স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক প্রীতম ফকির, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসমানি আশা ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল ইসলাম প্রমুখ।
এইচআর/এমটি/ওএফ