পোশাক শ্রমিকদের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্য ও নির্দেশদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। একইসঙ্গে সংগঠন দুটি শ্রমিকদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংগঠন দুটি আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, টঙ্গীতে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ওপর শিল্প পুলিশের ছোড়া গুলিতে ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। মজুরি, ছুটি বা অন্যান্য শ্রম অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি শিল্প সম্পর্কের নিয়মানুসারে মালিক এবং শ্রমিকের দ্বি-পাক্ষিক বিষয়। আর রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে পুলিশের দায়িত্ব শিল্প সম্পর্কের দুর্বল পক্ষ শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষায় সাহায্য করা। ভারসাম্যপূর্ণ স্থিতিশীল শিল্পসম্পর্ক অব্যাহত রাখা। অথচ ২০১০ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ নামে যাত্রা শুরু করা পুলিশের এ নতুন ইউনিট সাধারণ শ্রমিক আর শ্রমিক নেতাদের হয়রানি-নির্যাতনের মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলন, শ্রমিকের প্রতিবাদী কণ্ঠকে দমন করার দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করছে। কিন্তু শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী, শ্রমিকের পাওনা বেতন-ভাতা আত্মসাৎকারী কোনো শিল্প মালিককে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়ার নজির গত ১১ বছরে স্থাপন করতে পারেনি। মালিকদের শোষণ প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্ন করতে শক্তি প্রয়োগকে বৈধতা দিতে শ্রমিক আর সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় শিল্প মালিকদের নিরাপত্তা দিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রবর্তন করা হয়েছে। তাই আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বিলুপ্তির দাবি জানাচ্ছি।

তারা আরও বলেন, শিল্প মালিক আর রাষ্ট্র পরিচালকদের অব্যবস্থাপনা-সিদ্ধান্তহীনতা শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির জন্য দায়ী। শ্রমজীবী মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পাশ কাটাতে সরকারের নেওয়া কৌশল, করোনা নিয়ন্ত্রণে ঘোষিত লকডাউনকে মানুষের কাছে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করেছে। আর এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই কারখানাগুলোয় ঈদের সাধারণ ছুটির সঙ্গে অতিরিক্ত ছুটি দেওয়ার জন্য সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতেও জেনারেল ডিউটি করানো হয়েছে। ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই শ্রমিকরা গত দেড় মাস ধরে বিশ্রাম না নিয়ে কাজ করেছেন। উৎপাদন চালিয়ে রাখার জন্য প্রচার করা হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের ইমিউনিটি শক্তিশালী তাদের করোনা হয় না। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ঈদযাত্রায় করোনার বিষয়টি বিবেচনায় ছিল না। বাঁশখালীতে গুলি করে ৭  শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ীদের শাস্তি না হওয়ায় একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সহসভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, কোষাধ্যক্ষ জুলফিকার আলী, ঢাকা নগর সভাপতি ও বোম্বে সুইটস কোম্পানি লি. শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রতন মিয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক রোখসানা আফরোজ আশা, ঢাকা নগর সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি