সাম্প্রতিক ঘটনা অভ্যুত্থানের স্পিরিট পরিপন্থি : শিবির
বিভিন্ন ক্যাম্পাসসহ দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক ঘটনাকে জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট পরিপন্থি ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
রোববার(২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুতে লিখিত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। এ সময় ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
সভাপতি বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত যে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল তা অনেকাংশে অনুপস্থিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে না ওঠা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, কিছু রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বিভিন্ন অনলাইন ক্যাম্পেইন ও প্রোপাগান্ডা, ট্যাগিংয়ের রাজনীতিসহ নানাবিধ প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমের ফলে দেশে নতুন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, যা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট পরিপন্থি।
গতকাল শনিবার(২৫ জানুয়ারি) উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার উদ্রেক হয়েছে সেটি খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যের পথকে সংকুচিত করে দিতে পারে।
এর আগে আমরা লক্ষ্য করেছি, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) একটি ছাত্রসংগঠনের একজন কর্মী নিজ বিভাগের কয়েকজনকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে। যদিও বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ায় তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান।
গতকাল ২৫ জানুয়ারি (শনিবার) গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে আমরা এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ঘটনায় কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা বিভাজন সৃষ্টিকারী কিছু বক্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। এ অবস্থায় ছাত্র সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে সব পক্ষের কাছে আমরা আন্তরিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। ইসলামি ছাত্রশিবির ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে ঐক্য করতে প্রস্তুত।
সম্প্রতি আমরা আরও লক্ষ্য করেছি যে, একটি ছাত্রসংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাল সন্ত্রাসের ডাক দিয়ে বলেছেন ‘লাল সন্ত্রাসই মুক্তির একমাত্র পথ’। অতীতে আমরা দেখেছি যে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য লাল সন্ত্রাসের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ব্যাংক লুট, থানায় হামলা, নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে মৌলিক মানবাধিকার। আবার যদি সেই লাল সন্ত্রাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়, তবে দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে। এ ধরনের বক্তব্য ছাত্রসংগঠন তথা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা ও সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
শিবির সভাপতি বলেন, গত ৫ আগস্টে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশের অবারিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রায় বিগত ত্রিশ বছরের নিষ্ক্রিয় ছাত্রসংসদগুলো কার্যকর করার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত রাজনীতির সংস্কারের নতুন এক গতিধারা বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রহীনতার চর্চা, মতপ্রকাশে বাধা ও ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের অবাধ গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার বিকাশ ঘটানোর জন্য ক্যাম্পাসসমূহে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
অভ্যুত্থানের ৫ মাস পার হলেও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, চব্বিশের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা যে বর্বর হামলা চালিয়েছিল, তাতে হাজারো প্রাণ ঝরে গেছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ, রাজশাহীর আবু রায়হান, চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিম, ঢাকার শহীদ মুগ্ধসহ সহস্রাধিক ছাত্র-জনতাকে শহীদ করা হয়েছে। এই গণহত্যায় রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের কারণে জাতি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং এখনও তারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের আর বরদাশত করবে না। আমরা দাবি করছি, চব্বিশে যারা এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, অতিদ্রুত তাদের বিচারের রূপরেখা প্রণয়ন করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগ দোসরদের চাকরিচ্যুত করে বিচার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও অনেকাংশে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে দাবি করে শিবির সভাপতি বলেন, প্রশাসনে দায়িত্ব পালনরত হাসিনার দোসরদের দ্রুত সময়ে অব্যাহতি প্রদান করে দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি বিগত ১৫ বছরে দায়েরকৃত সব রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা প্রত্যাহার ও রাজবন্দিদের মুক্তি প্রদান করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
জেইউ/এআইএস