বিএনপিসহ সব দলকে পাঁচ বিষয়ে শপথ নেওয়ার আহ্বান
বিএনপিসহ সব দলকে পাঁচ বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে জাতির সামনে শপথ করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নো কম্প্রোমাইজ (কোন আপস নয়), দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, জাতীয় স্বার্থে এক ও অভিন্ন, দেশের উন্নয়নে জন্য দলের চেয়ে দেশ বড় নীতি অবলম্বন এই পাঁচ বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে জাতির সামনে শপথ গ্রহণ করতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ২০০৯ সালে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যার বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
এ সময় তিনি, অন্তবর্তীকালীন সরকারের গঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশনের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরাসরি জড়িত। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত আওয়ামী লীগকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী সরকারের মদদে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঐ হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করেছে ভারতীয় আজ্ঞাবহ বিডিআর জোয়ানেরা। কিন্তু তাদের কোনো বিচার না করে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করে বিচারের নামে অবিচার করে দণ্ড দিয়েছে, চাকুরিচ্যুত করেছে।
তিনি বলেন, ভিন্ন মত ও দল থাকবে, থাকতে পারে। কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐকমত্য হতে পারলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ হবে একটি শক্তিশালী জাতি ও রাষ্ট্র।
প্রসঙ্গক্রমে ডা. তাহের বলেন, সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিনিধি দল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন। সেসময় তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, ১৯৬৭ সালে স্বাধীন হয়ে এতো অল্পসময়ে কীভাবে সিঙ্গাপুর এতো সমৃদ্ধ হলো?- প্রতিনিধি দলের একজন মুহূর্তে জবাব দিলেন, আমরা একজন সৎ যোগ্য ও দেশপ্রেমিক আদর্শিক নেতা পেয়েছি। যিনি আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন।
ডা. তাহের বলেন, পক্ষান্তরে বাংলাদেশের জনগণ দেশ স্বাধীনের পর একজন চোর, দুর্নীতিবাজ নেতা পেয়েছে। সেজন্যই আমাদের আজও সংগ্রাম করতে হয়। ১৯৪৭ সালে আমরা প্রথম স্বাধীন হয়েছি তারপর ১৯৭১ সালে। কিন্তু জনগণ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি বলেই ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আর কোনো সংগ্রাম, সংঘাত নয় উল্লেখ করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহ্বান জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষ্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে আড়াল করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল একটি কালো অধ্যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও অধিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। এমনকি বাঁচাই করে করে উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের হত্যা করা হচ্ছে সেনানিবাসে এ সংবাদ দিলেও সেনাপ্রধান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তারা তখন পিকনিক করে বিরিয়ানি খাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, বিরিয়ানি খেয়ে জাহাঙ্গীর আলম নানক আর মির্জা আজমকে পাঠানো হয়েছে পিলখানায় সেনাকর্মকর্তাদের উদ্ধার করতে। এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, সরকারের সরাসরি মদদে পিলখানা হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে।
তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সঠিক বিচারের মাধ্যমে জড়িতদের ফাঁসি দিতে হবে। এসময় তিনি পিলখানা হত্যাকান্ডসহ প্রতিটি হত্যার বিচারের দাবি জানান।
সভায় কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির বলেন, সেদিন পিলখানার দরবার হলে শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেদিন সেখানে কেন যাননি? কারণ পিলখানা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত তাই তিনি সেখানে যাননি। এ ঘটনার পর শেখ হাসিনা বিডিআর সদস্যদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে সেনা সদস্যদের রক্তের সঙ্গে শুধু বেঈমানি নয় ঠাট্টা করা হয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটক না করে হাসিনার নির্দেশের নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করে চাকুরিচ্যুত করা হয়।
তিনি চাকুরীচ্যুতদের চাকুরি ফিরিয়ে দিতে এবং ঘটনার জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের দাবি জানান।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণে সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবছর এই দিনে উল্লাস করতে রাষ্ট্রীয় ভাবে নামে-বেনামে অনুষ্ঠান করেছে। কারণ পিলখানা হত্যাকাণ্ড জনগণের মন থেকে মুছে দিতে পারলে তারা এই হত্যাকাণ্ড দায় থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। কিন্তু রেহাই পাওয়া যাবে না। পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিটি হত্যার বিচার করতে হবে এটা শুধু জামায়াতে ইসলামীর দাবি নয় এটা পুরো জাতির দাবি।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার কিছু দিনের মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা এক ঢিলে পাঁচ পাখি মেরেছে। প্রথমত ৫৭জন চৌকস সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করেছে, দ্বিতীয়ত চৌকস দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে চেয়েছে, তৃতীয় শেখ হাসিনা পিতা হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করেছে, চতুর্থত বিডিআরকে নিঃস্ব করেছে, পঞ্চমত বিডিআরকে নিঃশেষ করে নতুন বাহিনী গঠন করে তাদের নতজানু বাহিনী সৃষ্টি করেছে। এতে ভারতের আধিপত্যবাদ বিস্তারের পথ সুগম করেছে।
তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর ইতঃপূর্বে যেই তদন্ত করা হয়েছে সেই তদন্ত একতরফা এবং নিজেদের মনগড়া তদন্ত। নতুন করে তদন্তে গঠিত কমিশনের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার বিচার করতে হবে।
জেইউ/এআইএস