ভারতে মুসলিম স্বার্থবিরোধী ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস ও বিজেপি সরকারের ধারাবাহিক মুসলিমবিরোধী পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।

শনিবার (৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে তারা বলেন, এই বিলটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার, ঐতিহাসিক আমানত এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার বিরুদ্ধে একটি ন্যাক্কারজনক হস্তক্ষেপ।

তারা আরও বলেন, নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন, অমুসলিমদের (মূলত হিন্দুদের) সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ বলে বিবেচিত হবে এবং কোনটি হবে না, সরকারকে তা নির্ধারণের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ ওয়াকফ করা সম্পদ পরিচালনা ও ভোগের একমাত্র হকদার মুসলমানরা। এই বিলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ওয়াকফ আইনকে দুর্বল করে দেওয়া এবং ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও দখল করার আইনি পথ তৈরি করা।

দলটির শীর্ষ এই দুই নেতা বলেন, মুসলমানরাই হলো ভারতের নির্মাতা। এই ভারত যা কিছু নিয়ে গর্ব করে তার প্রায় সবগুলোই মুসলিম শাসকদের অবদান।

৩০ কোটির বেশি মুসলিমের ভারতে বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। তারা আরও বলেন, প্রায় ৯ লাখ স্থাপনা রয়েছে, যাতে জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ একর। এসব সম্পদের দাম প্রায় দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার দাবি, শহর ও নগর এলাকায় ওয়াকফ বোর্ড হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বেশি জমির মালিক প্রতিষ্ঠান। আর সব মিলিয়ে হিসাব করলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও রেলওয়ের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ভূমির মালিক হচ্ছে মুসলমানদের এই প্রতিষ্ঠান।

তাদের দাবি, হিন্দুত্ববাদী উগ্র-বিজেপি এই সম্পত্তির প্রতি আজন্ম লোভ লালন করে আসছে। এরা ইতোমধ্যে ভারতের একাধিক স্থানে মন্দিরসহ বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের জন্য ওয়াকফ করা মুসলিম সম্পত্তি জবরদখল ও অবৈধ অধিগ্রহণ করেছে।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি কেবল জমি আর স্থাপনা নয়—এটি মুসলিম সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস, ইতিহাস এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি। এ সম্পদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ও গরীব-দুঃখীদের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

পাস করা সংশোধনী এই সম্পদের ব্যবস্থাপনায় হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সরকারকে আইনি ক্ষমতা প্রদান করে, যা সংবিধানের সংখ্যালঘু অধিকার ও তথাকথিত ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থীও বটে।

তারা আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি; মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি কর্তৃক ওয়াকফ বোর্ডের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরেকটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, এই বিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অবিচার এবং সামাজিক ঐক্যের পরিপন্থী।

ভারত সরকারকে অবিলম্বে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিল করতে হবে উল্লেখ করে খেলাফতের নেতারা বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বায়ত্তশাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। মুসলমানদের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত আরোপ করা চলবে না।

এএইচআর/এসএম