সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে ইসিতে বিএনপির অভিযোগ, করা হবে মামলাও
সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিরুদ্ধে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছে বিএনপি। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সিইসিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে এই তিন সিইসি এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা অন্য কমিশনারদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাও করা হবে।
রোববার (২২ জুন) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে জমা দিয়েছে দলটি। দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খানের (মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক) নেতৃত্বে একটি প্রতনিধি দল আবেদন নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আসেন। এসময় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে মিজানুর রহমান, ইকবাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এরপর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলার আবেদন করতে যান বিএনপির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনকে ঘিরে বারবার অভিযোগ করার পরও তৎকালীন সিইসি ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা আশা করি বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিএনপির মহাসচিবের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়েছি। যেহেতু নির্বাচন ভবন আগারগাঁও এলাকায়, সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হবে।
সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপির সালাহ উদ্দিন খান বলেন, এখানে সিইসি ও ইসি সচিব ছিলেন। আমরা তাদের কাছে অভিযোগ জমা দিলাম। আমরা আশা করি বর্তমান কমিশন এ অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তারা (আগের কমিশন) যেহেতু সংবিধান লঙ্ঘন করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন, এজন্য তাদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা থানায় এজাহার করা হবে।
তিনি জানান, তিন সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ এ মামলায় শেখ হাসিনাকেও রাখা হয়েছে। এখন অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কী আশ্বাস দিয়েছেন, জানতে চাইলে এ বিএনপি নেতা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের বলেছেন— কপি রিসিভ করেছেন, যা পারেন আইনি ব্যবস্থা নেবেন। সিইসি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা নিরপেক্ষ। যে আইনি ব্যবস্থা সেটাই নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিইসি, ইসি ও সচিবদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মামলার পদক্ষেপ এলো।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দিয়ে ভোট বর্জন করে বিএনপি।
আরও পড়ুন
তখন কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ, সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাবেদ আলী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নীশিরাতের নির্বাচন’।
তখন কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশনের সদস্য ছিলেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বিএনপি ও সমমনারা বর্জন করে। এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন।
এসময় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। সবশেষ গত ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে সরকারপ্রধানের দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া ‘বিতর্কিত’ তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এসআর/এসএম