জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন চায়, তবে বিগত ৫৪ বছরের ইতিহাসের কেন্দ্র দখল-ভোট বাক্স লুটের নির্বাচন চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্ল্যাহ মোহাম্মদ তাহের।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারাই সরকার গঠন করেছে তারা জনগণের ভোটের নামে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। এজন্যই জামায়াতে ইসলামী বারবার দাবি জানাচ্ছে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত এবং জনগণের প্রতিটি ভোটের মূল্যায়নের জন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে। 

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় বড় দল দাবি করা দলকে জামায়াতে ইসলামীকে অনুসরণ করে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে। 

সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, জামায়াত যখনই সংস্কারের কথা বলছে একটি দল প্রচার করছে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। অথচ যারা সংস্কার ছাড়া হাসিনা মার্কা নির্বাচন চায় তারাই জাতির সঙ্গে প্রতারণা করতে সংস্কারের পরিবর্তে যেনতেন নির্বাচন চায়।

ভোট চুরি, কেন্দ্র দখলের চিন্তা না থাকলে সংস্কারে আপত্তি কেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, গণহত্যার বিচার শেষ করে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে আসেন। বড় দল, কোনো দলের মৌলিক পরিচয় হতে পারে না। মৌলিক পরিচয় হচ্ছে আদর্শ, নীতি এবং ত্যাগের রাজনীতি।  

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা দ্বীনকে বিজয়ী করার আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী। এজন্য জামায়াতের কর্মীরা গর্বিত। যার কারণে জামায়াতের কর্মীদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী করতে হয় না। 

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে আমি ও ডামি নির্বাচন করে দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এবার জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত। এই নির্বাচন যেনতেন একটি নির্বাচন করার চেষ্টা করলে জনগণ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিহত করবে। 

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আরেকটি দল নিজেদের এ দেশের মালিক ভাবা শুরু করছে। বাংলাদেশ কোনো একক ব্যক্তি কিংবা নির্দিষ্ট পরিবারের নয়, ১৮ কোটি জনগণের বাংলাদেশ। যারাই হাসিনার মতো বাংলাদেশকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করবে তাদের পরিণতি হাসিনার মতোই হবে। 

ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্র শিবিরের সাবেক এ কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের সহকারী সেক্রেটারি সাবেক এমপি এইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, জামায়াত একটি আদর্শবাদী দল। জামায়াতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এই দেশে নিয়মতান্ত্রিক ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। জামায়াতে ইসলামী অন্য দলগুলোর মতো ক্ষমতার রাজনীতি করে না। রাজনীতির মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা করে এবং করবে। যারা ক্ষমতার উদ্দেশ্যে রাজনীতি করে তারা ক্ষমতায় থাকলেও লুটপাট করে, ক্ষমতার বাহিরে থাকলেও লুটপাট করে। ইতোমধ্যে জাতি সেটি দেখতে পাচ্ছে। 

তিনি বলেন, ৫৪ বছরের বাংলাদেশ লুটপাটের বাংলাদেশ, দুর্নীতিতে তিন-তিনবারের চ্যাম্পিয়নের বাংলাদেশ, গণতন্ত্র হত্যার বাংলাদেশ, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুনের বাংলাদেশ, কন্ঠরোধের বাংলাদেশ। জামায়াতের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন একটি সুখী-সমৃদ্ধ কল্যাণ ও মানবিক বাংলাদেশ।    

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বিগত ১৭ বছরে জামায়াতে ইসলামীর ওপর জুলুমের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু করে সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর ওয়ার্ড পর্যায়ের অফিস পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজার মিথ্যা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক মামলায় জামায়াতে ইসলামীর লাখ-লাখ নেতাকর্মীকে ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। কারাগারে আটকে অমানবিক জুলুম নির্যাতন চালানো হয়েছে। নেতৃত্ব শূন্য করতে দলের শীর্ষ ১১ নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে বিচারিক হত্যা করা হয়েছে। তবুও জামায়াতের কার্যক্রম একদিনের জন্যও থেমে যায়নি। 

তিনি বলেন, এখনো জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্রে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা থেমে যাবে না। অতীতের মতো তিনি উপস্থিত কর্মীদের সমাজকর্মীর ভূমিকায় নিয়োজিত থাকার আহ্বান জানান। 

দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ঢাকা-১০ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির, ঢাকা -৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান ও মো. শামছুর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ। এছাড়াও সম্মেলনে মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্যসহ দায়িত্বশীল নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জেইউ/এমএন