পিআর পদ্ধতি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা আপনাকে ভালো মানুষ হিসেবে জানি। আপনি বলছেন সংস্কার করবেন। আপনি সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন ঘোষণা করলে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত গণমিছিলোত্তর সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে (মহাখালী রেলগেট) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ বিশাল সমাবেশ ও গণমিছিলের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় গণমিছিলোত্তর সমাবেশে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, জনগণ আপনাকে (ড. ইউনূস) বসিয়েছে। আপনি কিন্তু রাজপথে ছিলেন না। টেলিভিশনের খবর দেখেছি আপনি বিদেশে ছিলেন। রাস্তায় আপনার চেহারা দুরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার কোনো ভাই-ব্রাদারের সন্তান রাজপথে জীবন দেয়নি। আমাদের রক্তের মাঠে দাঁড়িয়ে, আমাদের লোকদের লাশের ওপর দিয়ে আপনি ক্ষমতায় গেছেন। আমরাই এনেছি, আমরাই আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আমরা আশা করব, আপনার মতো সজ্জন ব্যক্তি জাতির সঙ্গে বেইমানি-বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।

তিনি বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি নয়, আদর্শের কারণে আপনাকে বসিয়েছিলাম। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপনাকে বসিয়েছিলাম। যদি আবার বিশ্বাসঘাতকতার গন্ধ পাই যে, স্বৈরাচারকে সহযোগিতা করছেন, স্বৈরাচার গড়ারও ষড়যন্ত্র করছেন, তাহলে জনগণ আপনাকেও ছাড় দেবে না।

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, দুর্ভাগ্য বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য, সংগ্রামের জন্য ১৯৫২ সালেও রক্ত দিয়েছি, ১৯৬২তে রক্ত দিয়েছে দেশের মানুষ, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। বারবার সংগ্রাম করে সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে জনগণ।

ডা. তাহের বলেন, কিন্তু জনগণ যেই ডাল ধরে, সেই ডাল ভেঙে পড়ে। আপনারা বিএনপিকে দেখেছেন, আওয়ামী লীগকেও দেখলেন শাসন ক্ষমতা থেকে পালাতে কিন্তু এ দেশের মানুষের মুক্তি আসেনি। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করে স্পষ্ট বলতে চাই, একবার যদি আপনারা আমাদের সুযোগ দেন, একবার যদি আমাদের ওপর আস্থা রাখেন তাহলে দুর্নীতির ইতিহাসকে আমরা মুছে দেব। কোনো দুর্নীতি থাকবে না। কোনো দুর্নীতিবাজ জনগণের পাশে থাকবে না। হয় জেলে, নয়তো দুর্নীতি ছাড়তে হবে। আমরা কোনো দুর্নীতি করব না, সরকারি কোনো গাড়ি, প্লট নেব না, কোনো দুর্নীতির লেস মাত্র পেলে আমরাই আমাদের এমপিকে জেলে দেব।

‘সুতরাং, একটি দুর্নীতিমুক্ত সব মানুষের অধিকারসম্পন্ন উন্নত একটি বাংলাদেশ গড়তে আজ আপনাদের সামনে আমি অঙ্গীকার করছি।’

তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয় যে, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীরা বাইরে বের হতে পারবে না। নারীরা পর্দার সাথে বের হবে। এখন নারীরা বের হয় কিন্তু কোনো নিরাপত্তা নেই। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীরা নিরাপত্তা পাবে, নির্বিঘ্নে বাইরে বের হবে, চাকরি করবে, প্রয়োজনে ব্যবসাও করবে।

ডা. তাহের বলেন, আমাদের নিয়ে সংখ্যালঘুদের বিভ্রান্ত করা হয়। বিগত সময়ে তো আমাদের এমপি ছিল, মন্ত্রী ছিল। সেই সময় আমাদের এমপি-মন্ত্রীদের এলাকায় সংখ্যালঘুরাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদে বসবাস করেছিলেন। আমি এমপি ছিলাম, আমার বিরুদ্ধে যদি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কোনো সংখ্যালঘু হিন্দু ভাই অভিযোগ করেন তাহলে আমি প্রকাশ্যে তাদের কাছে ক্ষমা চাইব। রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ কখনো অভিযোগ করতে পারবে না।

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, যতদিন আমাদের জীবন, ততদিন আমাদের লড়াই; যতদিন আমাদের জীবন, ততদিন যুদ্ধ। সব অন্যায়, অত্যাচার জুলুমের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর লড়াই চলবে।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকার এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন।

গণমিছিলটি মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় এসে মহানগর আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

জেইউ/এসএসএইচ