বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় তাহের
বলতে চাই না কিন্তু শুনতে হচ্ছে আজকের বিএনপি জিয়াউর রহমানের বিএনপি নয়
যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় না তারা ডাকসু নির্বাচনে ভয় পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে চাই না কিন্তু আমাদেরকে শুনতে হয় আজকের বিএনপি সেই জিয়াউর রহমানের বিএনপি নয়।’
বিজ্ঞাপন
জনগণের আস্থাশীল হতে হলে আজকের বিএনপিকে জিয়াউর রহমানের বিএনপি হতে হবে উল্লেখ করে তাহের আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপি ছিল বড় দল, আজ সেই জায়গায় অবস্থান করে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী’।
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পরাজিতরা জাকসু, চাকসু, রাকসু নির্বাচন বন্ধে কত শত ষড়যন্ত্র করেছে তা শিক্ষার্থীর পাশাপাশি দেশবাসীও দেখেছে। তারা বুঝতে পারছে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাহলে পরাজয়ের ভরাডুবি খেতে হবে। সেজন্য তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যেভাবে বিরোধিতা করেছে একইভাবে গণভোটের বিরোধিতা করছে।
তাহের বলেন, ‘সিপাহি-জনতার বিপ্লব আর ছাত্র-জনতার বিপ্লব একই সূত্রে গাঁথা’। সিপাহি-জনতার বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে হলেও জাতীয় ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শহীদ জিয়াউর রহমান ও শহীদ গোলাম আজমের জানাজা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জানাজা। এই দুটি জানাজা বলে দেয় তাদের জনপ্রিয়তার পরিধি।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই না কিন্তু আমাদেরকে শুনতে হয় আজকের বিএনপি সেই জিয়াউর রহমানের বিএনপি নয়।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানের অনুসারীরা তার আদর্শ ভুলে গেছে। যার কারণে তারা এখন গণতন্ত্র চর্চা করে না, মানুষের সেন্টিমেন্ট তারা বুঝতে পারছে না, বুঝতে চেষ্টাও করছে না। তারা সংস্কার চায় না। তাদের দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য যিনি সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর তিনি বলেছেন সংস্কার তারা চায় না।
ডা. তাহের বলেন, আপনারা না চাইলেও জনগণ চায়। জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝে রাজনীতি না করলে আওয়ামী লীগের মতোই পরিণতি হতে পারে।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আগে এ দেশের জনগণের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী তিনি যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তারপর থেকে তিনি জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেন। গুড গভর্নেন্স দিতে না পারায় ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা নষ্ট হতে শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান ভালো ভাষণ দিতে পারলেও ভালো শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তিনি রাষ্ট্র শাসনের পরিবর্তে রাষ্ট্রের জনগণকে শোষণ করেছেন। বাকশাল কায়েম করে রক্ষীবাহিনী দিয়ে জনগণের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছেন। যার কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে মানুষ ইন্না লিল্লাহও পড়েনি। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তার দলীয় নেতারাও আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ দেন। তিনি মসিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ্ আব্দুল আজিজকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন। একাত্তরে তাদের কী ভূমিকা ছিল দেশবাসী জানে, আমরা বলতে চাই না। তবে জিয়াউর রহমান চেয়েছেন সকলকে নিয়ে ঐকমত্যের একটি সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে। জিয়াউর রহমানের সেই আদর্শ আজকের বিএনপি চর্চা করে না।
গণভোট প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, সময়ক্ষেপণ করে লাভ নাই, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। যতই চালাকি করে সময় নষ্ট করা হোক না কেন, আগে গণভোট তারপর জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। নতুবা জনগণ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় আবার রাজপথে নেমে আসবে।
সংকট সৃষ্টি না করে তিনি নভেম্বরের মধ্যে গণভোট সম্পন্ন করে জুলাই সনদের আলোকে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী ৭ নভেম্বর সংগঠিত ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব থেকে স্পষ্ট– বাংলাদেশের জনগণ যখন যেই ভূমিকা রাখা দরকার তখন সেই ভূমিকা পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশের সব আন্দোলন সংগ্রাম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হলেও চব্বিশের জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে। জুলাই আন্দোলন চলাকালীন একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব বলেছিলেন, তার দলের কেউ এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয়।
তিনি আরও বলেন, সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জুলাই সনদের আদেশ জারি করে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট দিয়ে সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার বিপ্লব সংগঠিত হবে। বাংলাদেশের রাজপথকে আর রক্তে রঞ্জিত না করতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় মহানগরী কার্যালয়ের হলরুমে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির (ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী) অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, মহানগর অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান হাসান, সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন, সহকারী মিডিয়া সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সহকারী অফিস সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
জেইউ/এসএসএইচ