জেনেভায় জাতিসংঘ প্রাঙ্গণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ
জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) জেনেভায় জাতিসংঘ ব্রোকেন চেয়ারের পাদদেশে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে সুইজারল্যান্ডের মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশ ও ঢাকার পলিসি মিডিয়া প্রেস এক্সপ্রেস।
বিজ্ঞাপন
বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে আরেকবার বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণসহ তুলে ধরেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা বলেন, বাংলাদেশে সহিংসতাকারীরা, যারা ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও বিরোধীদলকে দমন-পীড়নের সঙ্গে যুক্ত, তারাই আবার মানবাধিকারের কথা বলতে শুরু করেছে। বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কামনা করে বিএনপি যা করছে তা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও দেশের গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
সমাবেশ থেকে অনুষ্ঠানের ঘোষণাপত্র পড়ে শোনান জেনেভা গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউটের ইন্ট্যারন্যাশনাল রিলেশন বিভাগের ছাত্রী ফারহানা হোসেন উপমা। ঘোষণাপত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞাপন
ঘোষণায় বলা হয়, যে দেশ মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে, সেই দেশকে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করার কথা বলে স্যাংশনের মুখে ফেলা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, মানবাধিকারকর্মী থেকে শুরু করে প্রগতিশীল মানুষ নির্বাচনকালীন সহিংসতা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ, তারা ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা দেখেছে।
জেনেভার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জমাদার নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান ও ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ড শাখার সভাপতি রহমান খলিলুর মামুন। সমাবেশে সাংগঠনিকভাবে সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন সর্বইউরোপীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও ইউরোপে বসবাসরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ও বিদেশি অ্যাক্টিভিস্ট।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ৫৪তম অধিবেশন চলছে। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের সরকারবিরোধী মিথ্যা ও অপপ্রচার তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। সে কারণে জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনেই আমরা এ সভার আয়োজন করেছি।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত যে সহিংসতা করেছিল আলোকচিত্রের মাধ্যমে তার প্রমাণ হাজির করে বক্তারা বলেন, যারা বিদেশে এসে এখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের নালিশ করে, তারা কী কী ঘটিয়েছিল তা প্রদর্শন করা জরুরি।
সমাবেশে ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশের সভাপতি রহমান খলিলুর মামুন বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে রেখেছিল। নির্বাচনের পর দিনই তারা দেশজুড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন চালায়, আওয়ামী সমর্থক নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি, দোকান সব পুড়িয়ে দেয়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং এ বিষয়ে কানাডার আদালতের অবজারভেশন আছে।
জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দয়া করে এদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। বিএনপি-জামায়াত যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। আর কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম সেখানে যেন এই দলগুলো চালাতে না পারে।
সমাবেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে শেখ হাসিনার প্রশংসা করে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ‘সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির নির্বাহী প্রধান জোসেফ জোন্স, নেদারল্যান্ডের প্রবীণ সংসদ সদস্য হ্যারী ভ্যান ভোমেল, ব্রিটিশ লেখক ও সাংবাদিক গ্যারী কার্টরাইট, জেনেভা জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মী মাদাম নিশা প্যারিস, মানবাধিকার কর্মী ও বালোচ ভয়েস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনীর মেংগল, মানবাধিকার কর্মী ও সভাপতি ইউ কে পি এন পির সভাপতি শওকত হোসেন কাশ্মির।
সমাবেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা থেকে অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমাডোর এ ডাবলু চৌধুরী।
সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য দেন সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ বেপারী, সহ সভাপতি জাহানারা বাশার, সহ সভাপতি মশিউর রহমান সুমন, সহ সভাপতি আনিস হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মাসুম খান দুলাল, সর্বইউরোপীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া আবুল কালাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অমি রহমান পিয়াল ও সুইজ্যারল্যান্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক পলাশ বডুয়া এবং বাংলাদেশ মাইনরিটি কাউন্সিল কমিটির সভাপতি অরুন বড়ুয়া।
/এসএসএইচ/