কানাডা প্রবাসী লেখক মোস্তফা আকন্দ ও নেসার আহমেদের ফারাক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

শনিবার (২ মার্চ) কানাডার টরন্টো শহরের স্থানীয় একটি হোটেলে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
 
অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় উপনেতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিপি ডলি বেগম গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কানাডা প্রবাসী আসমা আহমেদ। 

ডলি বেগম তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ফারাক বইটির লেখকদের আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তারা কমিউনিটির জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। টরন্টোতে বাঙালি যুবকদের আত্মহত্যার বিষয়ে লেখকরা গবেষণা করেছেন কয়েক বছর আগে। খুব ভালো কাজ ছিলে সেটা। অনেকেই বাচ্চাদের সাথে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিয়ে আমার কাছে আসেন। তাদেরকে আমি তেমন একটা সাহায্য করতে পারি না কারণ প্যারেন্টিং একটা ইস্যু। সম্পূর্ণ বাংলায় লিখিত ফারাক বইটি টরোন্টো বাঙালি কমিউনিটির অভিভাবকদের প্যারেন্টিং সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। কমিউনিটির সবাইকে বইটি পড়া উচিত। 

ফারাক গ্রন্থটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর প্রাক্তন সাংবাদিক ও টরন্টো ভিত্তিক অনলাইন পত্রিকা নতুন দেশের সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, ফারাক গ্রন্থটি প্যারেন্টিং বিষয়ের ওপর লিখিত একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ যেখানে আমাদের প্যারেন্টিং এর চ্যালেঞ্জগুলোকে গল্পের ঢংয়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। গল্পগুলো সুখপাঠ্য। পড়তে পড়তে মনে হবে আমি এই শহরেরই কোন গল্পের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি আর মানসিক স্বাস্থ্য ও প্যারেন্টিং বিষয়ে শিখছি। এই শিক্ষণটা আমাদের ও আমাদের সন্তানদের মধ্যকার দূরত্ব কমাতে সাহায্য করবে। 

টরন্টো প্রবাসী কবি, গল্পকার ও টরন্টো ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ড এর স্পেশাল নিডস্ শিশুদের শিক্ষিকা সঙ্গীতা ইয়াসমিন বইটির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, শুধু সন্তান জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায়না। বাবা-মা হতে গেলেও কিছু দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ থাকা দরকার হয়। "ফারাক" অনেকটা গবেষণাধর্মী তথ্য সম্বলিত এবং বাস্তব ঘটনার প্রতিচ্ছবি নিয়ে রচিত গ্রন্থ। সেসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই আমাদের মত হাজারো বাবা-মা অন্তত নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে শিখবেন। 

টরন্টোর বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন বলেন, কোন বই যে এভাবে লেখা যায়, আমি  কখনো দেখিনি। বইটি প্যারেন্টিং এর ওপর লিখিত বই। কিন্তু লেখকদ্বয় গল্প বলেছেন আর প্যারেন্টিং শিখিয়েছেন। শেষে প্যারেন্টিং এর ওপর একাডেমিক আলোচনাও করেছেন। বইটি পড়া শুরু করলে আপনি শেষ না করে ছাড়তে পারবেন না। কমিউনিটির মানুষদের বইটি পড়া উচিৎ।
 
টরন্টোর চিকিৎসক ডা. নিলাঞ্জনা দত্ত বলেন, মোস্তফা আকন্দর লেখা আমার খুবই ভালো লাগে। তিনি আমাদের সমাজের সমস্যাগুলোকে এমন সুন্দরভাবে তার লেখা গল্পে তুলে ধরেন যে, মনেই হয়না এটা কোনো তথ্যবহুল আলোচনা। আর বইটির সহ-লেখক নেসার আহমেদের প্রফেশনাল লেবেল অনেক উঁচু। ফারাক বইটি সবাইকে পড়ার আহবান করছি। 

অন্টারিওর গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহতাব শাওন বলেন, ফারাক নামটাই একটা সার্থক নাম। আপনারা বইটি পড়লেই বুঝতে পারবেন, কেন এই নামটি রাখা হয়েছে? বইটির পটভুমি আমার জানা। যে গবেষণা লেখকদ্বয়কে বই লিখতে উৎসাহ যুগিয়েছে সেই গবেষণাটির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। কয়েক বছর আগের টরন্টোর বাঙালি তরুণদের আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানের গবেষণার মূল ফলাফল ছিল মা-বাবার সাথে সন্তানের যোগাযোগের অভাব’ বা প্যারেন্টিং ইস্যু। এ বিষয়টি কখনো আমাদের কমিউনিটিতে এড্রেস করা হয়নি। তিনি সবাইকে বইটির অষ্টম অধ্যায়টি ভালোভোবে পড়ার অনুরোধ।
 
আমরা বাংলাদেশি ক্যানাডিয়ান ফেসবুক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজসেবা মূলক কাজের উদ্যোক্তা ড্যানিয়েল হাকিম (ড্যান ড্যান), সবাইকে ফারাক বইটি পড়তে অনুরোধ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্যারেন্টিং স্টাইল চেঞ্জ হয়নি। বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে সম্পর্ক এর ফারাক তৈরিতে এটাই ভূমিকা রাখছে। বইটা আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সেই দূরত্ব বা গ্যাপ পূরণে সহায়তা করতে পারে। 

বইটির সহ-লেখক নেসার আহমেদ উপস্থিত অতিথিদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ফারাক বইটি সময়োপযোগী । বইটি গল্প সমৃদ্ধ হলেও সবগুলো গল্পই সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লেখা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিজেদের প্যারেন্টিং স্টাইলে পরিবর্তন আনতেই হবে। বইটি আমাদের সেই পরিবর্তন আনতে সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। 

মোস্তফা আকন্দ বইটির ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমরা সবাই আমাদের বাচ্চাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাই। কিন্তু নতুন দেশ নতুন সময়ের চাহিদারে সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা নিজেরা নিজেদের পরিবর্তন করতে ইতস্ততবোধ করি। ফলে আমাদের সঙ্গে আমাদের সন্তানদের ফারাক তৈরি হয়। নতুন দেশের রীতিনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পারলে আমরা পিছিয়ে যাবো। বিদেশি সংস্কৃতি ও আমাদের সংস্কৃতির চাপে আমাদের বাচ্চারা স্যান্ডউইচ বেবি হিসেবে বেড়ে উঠবে অথবা হারিয়ে যাবে। আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি করবো। কারণ বাচ্চাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বইটি বাবা-মায়েদের প্যারেন্টিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে সন্দেহ নেই।

অনুষ্ঠানে আরো মতামত ব্যক্ত করেন, প্রথম আলোর প্রাক্তন সাংবাদিক ও কানাডা প্রবাসী লেখক সুব্রত নন্দী, টরন্টোর বিশিষ্ট সমাজকর্মী মোস্তফা কামাল, টরন্টো ভিত্তিক অলাভজনক দাতব্য সংস্থা বেঙ্গলী ইনফরমশেন এন্ড এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস (বিআইইএস) এর নির্বাহী পরিচালক ইমাম উদ্দিন, টরন্টোর বিশিষ্ট সমাজকর্মী বদিউজ্জামান মুকুল, বিমান বাংলাদেশের প্রাক্তন ট্রেনিং ম্যানেজার, লেখিকা ও টরন্টোর নারী উদ্যোক্তা সাবিনা শারমিন, টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড এর শিক্ষক ড. ফখরুদ্দীন, অন্টারিওর নিবন্ধিত সমাজকল্যাণ কর্মী ও উপন্যাসিক জাকারিয়া মুইনুদ্দিন, কানাডা প্রবাসী অ্যাডভোকেট আক্তার মোসাম্মাৎ, ক্যানবাংলা টেলিভিশনের কর্ণধার ড. মো. হুমায়ন কবির চৌধুরী, পিল ডিষ্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড এর সিনিয়র শিক্ষক এমডি হাসান তারিক, বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমেদ, বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী নাসিমা পারভীন ও মেফিল্ড হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী মেহরীন মুস্তারী প্রমুখ।

এমএসএ