কোনও জিনিস হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে?
প্রতীকী ছবি
ইসলাম, শব্দের অর্থ, আত্মসমর্থন করা। মুসলিম অর্থ, আত্মসমর্থনকারী। একজন মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করার মানে হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার নাজিল করা কিতাব কোরআন, রাসুলের বর্ণিত হাদিস ও শরীয়তের সব বিধানের সামনে নিজেকে সমর্পন করে দেওয়া। নিজের পছন্দ অপছন্দের ওপরে আল্লাহর হুকুমকে প্রাধান্য দেওয়া ও পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে তা পালন করা।
সময়মতো নামাজ
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তায়ালার ওপর বিশ্বাস স্থাপন ও আত্মসমর্থনের পর একজন মুসলমানের পরবর্তী প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজকে ঈমানদারের জন্য নির্ধারিত সময়ে (আদায় করা) আবশ্যক কর্তব্য করা হয়েছে।’ -(সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)
নামাজ মানুষ খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আপনার প্রতি যে কিতাব ওহি করা হয়েছে তা পাঠ করুন এবং যথাযথভাবে নামাজ আদায় করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)
বিজ্ঞাপন
নামাজ অনাদায়ে শাস্তি
নামাজ আদায় না করলে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ -(সুরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৩)
নামাজে মনোযোগ
নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা অবশ্যক। মনোযোগহীন নামাজ আল্লাহ তায়ালার দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না এবং এমন নামাজ নিজেই নামাজীর প্রতি অভিসম্পাত করে বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ,যারা তাদের নামাজে ভীতি-অবনত।’ -(সুরা মুমিনুন, আয়াত, ১-২)
মনোযোগ ও একাগ্রতা নামাজের প্রাণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছো। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)
আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে (একাগ্রতার সঙ্গে) দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যেই নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’ -(নাসায়ি, হাদিস : ১৫১; বুখারি, হাদিস : ১৯৩৪)
কোনও কিছু চুুরি বা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে
কোরআনের আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে বুঝা যায়, নামাজে অমনোযোগিতার কোনও সুযোগ নেই। তবে অনেক সময় এমন কিছু ঘটে যায় যে কারণে অবচেতন মনে মনোযোগ অন্য দিকে চলে। এমন একটি পরিস্থিতি হলো,
কেউ নামাজ পড়ার সময় আশপাশ থেকে মূল্যবান কোনও জিনিস চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, অথবা নামাজে দাঁড়ানোর আগে কোনও জিনিস ঠিকমতো সংরক্ষণ না করায় নামাজ শুরুর পর বারবার তা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হতে থাকা। এতে নামাজের ক্ষতি হয় এবং মনোযোগ একেবারে থাকে না।
ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত
এই পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো, মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় জিনিস হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে তা হেফাজত ও সংরক্ষণের জন্য নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েজ আছে।
আলেমদের মতে একাধিক তাবেয়ি থেকে বর্ণিত আছে যে, নামাজ অবস্থায় তাদের আরোহী চলে যাচ্ছিল তখন তারা নামাজ ছেড়ে দিয়ে আরোহী হেফাজত করেছেন। আর কোনো কোনো ফকিহ বলেছেন, এক দিরহাম অর্থাৎ ৩.০৬১৪ গ্রাম রুপা সমপরিমাণ সম্পদ হেফাজতের জন্যও নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েজ আছে। যা বর্তমান মূল্য হিসাবে প্রায় ৩১৫ টাকা হয়।
বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রয়োজন ও পরিস্থিতিতে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার বিধান থাকলেও প্রত্যেকের উচিত হলো, নামাজে দাঁড়ানোর আগেই দামি জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে রাখা, যেন নামাজ অবস্থায় এ কারণে মনোযোগ নষ্ট না হয়। -(মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ২/২৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৫১)
এনটি