মিরাজের শিক্ষা ও প্রাপ্তি কী?

ইসলামের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা শবে মেরাজ। এটি মহানবী (সা.)-এর বিশেষ মুজেজা, বৈশিষ্ট্য ও সম্মাননা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া অন্য কোনো নবী এই সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি।

শবে মিরাজ পবিত্র রজব মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। মহান আল্লাহ মেরাজের রাতে তার সবচেয়ে প্রিয় বান্দা মুহাম্মদ (সা.)-কে নিজ সান্নিধ্যে ডেকে নিয়ে রাষ্ট্রের রূপরেখাসহ নানাবিধ শিক্ষা দেন। এছাড়াও উম্মতে মুহাম্মদিকে পুরস্কারস্বরূপ কয়েকটি বিষয় দান করেন—

এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফজিলতের দিক দিয়ে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সমান।

দুই. সুরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত মেরাজেই অবতীর্ণ হয়। এ আয়াতগুলোতে উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।

তিন. উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদের ক্ষমা করার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে মেরাজে। চার. নামাজে যে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়া হয়, সেটিও মেরাজের উপহার।

আল্লাহর রাসুল (সা.) মেরাজ থেকে ফিরে আসার পর সুরা বনি ইসরাইলের ২২ থেকে ৩৭ নং আয়াতের মাধ্যমে ১৪ দফা জনগণের সামনে পেশ করেন—

এক. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত করো (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২২)

দুই. বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাদের সাথে উহ্ শব্দটি পর্যন্ত করো না। তাদের ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না; বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো। আর তাদের সামনে বিনয়ী থেকো আর দোয়া করতে থাকো- ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের তেমনিভাবে লালন-পালন করো, যেমনি তারা শৈশবে আমাদের লালন-পালন করেছেন’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩-২৪)।

তিন. তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের মনের খবর জানেন (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৫)।

চার. আত্মীয়স্বজনকে তাদের অধিকার দাও আর মিসকীন ও মুসাফিরদের হক আদায় কর (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬)।

পাঁচ. অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই, আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৭)।

ছয়. হকদারদের হক আদায়ে তুমি যদি অপারগ (অসমর্থ) হও তাহলে তাদের সাথে অত্যন্ত নম্রভাবে কথা বলো (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৮)।

সাত. ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেহিসাবি হয়ো না, আবার কৃপণতাও প্রদর্শন কর না। আল্লাহ যাকে চান রিজিক বাড়িয়ে দেন, যাকে চান কমিয়ে দেন (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯-৩০)।

আট. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করো না। নিশ্চয়ই এটি মহাপাপ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩১)।

নয়. জিনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটি নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩২)।

দশ. কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করো না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি এই অধিকার দিয়েছি (চাইলে রক্তের বিনিময় চাইতে পারে), তবে প্রতিশোধের ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৩)।

এগার. এতিমের সম্পদের ধারের কাছেও যেও না। সম্পদের ব্যাপারে তার বয়োপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করো আর প্রতিশ্রতি সম্পর্কে সচেতন থাকো। নিশ্চয়ই প্রতিশ্রতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৪)।

বারো. মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দিবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়ি পাল্লায়। এটিই উত্তম পন্থা এবং এর পরিণাম শুভ। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৫)।

তের. যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেগুলোর পেছনে লেগো না। নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তর সব কিছুই জিজ্ঞাসিত হবে (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৬)।

চৌদ্দ. জমিনে দম্ভসহকারে চলো না। তুমিতো কখনও জমীনে ফাটল ধরাতে পারবে না এবং উচ্চতায় কখনও পাহাড় সমান হতে পারবে না। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৭) 
এই ১৪ দফাই শবেমেরাজের প্রকৃত শিক্ষা।

সংকলক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও কলাম লেখক