প্রতীকী ছবি

নবীজি (সা.)-এর অন্যতম মুজিজা মেরাজ। যে রাতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুকে বিরল সম্মাননা দিয়েছিলেন। সে রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বন্ধুকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে যান, তারপর সেখান থেকে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করান। 

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ০১)

নবীজি (সা.) মিরাজ থেকে ফিরে যখন তাঁর সঙ্গে ঘটিত ঘটনাগুলোর বর্ণনা দেন, তখন কুরাইশরা তা বিশ্বাস করছিল না। এবং নবীজিকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মসজিদে আকসার বিভিন্ন স্থাপনার বিবরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তখন মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-এর সামনে মসজিদে আকসা তুলে ধরেন, যা দেখে নবীজি (সা.) কাফেরদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে করা প্রশ্নগুলোর নির্ভুল উত্তর দিয়েছেন।

 হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যখন কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কাবার হিজর অংশে দাঁড়ালাম। আল্লাহ তাআলা তখন আমার সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসকে তুলে ধরলেন, যার কারণে আমি দেখে দেখে বাইতুল মুকাদ্দাসের নিদর্শনগুলো তাদের কাছে ব্যক্ত করছিলাম। (বুখারি, হাদিস : ৩৮৮৬)

নবীজি (সা.)-এর জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় বর্তমান যুগের সাড়া জাগানো প্রযুক্তি ভার্চুয়াল রিয়ালিটির ধারণা পাওয়া যায়। যেহেতু এতগুলো মানুষ নবীজি (সা.)-এর সামনে ছিল; কিন্তু নবীজি (সা.) ছাড়া আর কেউই আল্লাহর প্রদর্শিত বাইতুল মুকাদ্দাস দেখতে পায়নি। তাই তা তখনকার যুগের অবিশ্বাসীদের জন্য মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু বর্তমান যুগে ভার্চুয়াল রিয়ালিটির সঙ্গে পরিচিত মানুষের কাছে নবীজি (সা.)-এর সেই দাবি বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত সত্য।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ-এর অধীনে প্রকাশিত তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বইয়ে ভার্চুয়াল রিয়ালিটির সহজ সংজ্ঞা পাওয়া যায়। সেখানে লেখা হয়েছে, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে কৃত্রিম বাস্তবতা, অর্থগতভাবে শব্দ দুটি যদিও স্ববিরোধী কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটি এমন এক ধরনের পরিবেশ তৈরি করে, যেটি বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের মতো চেতনা সৃষ্টি করে এবং মস্তিষ্কে একটি বাস্তব অনুভূতি জাগায়। আমরা জানি স্পর্শ, শোনা কিংবা দেখা থেকে মানুষের মস্তিষ্কে একটি অনুভূতির সৃষ্টি হয়। যেটাকে আমরা বাস্তবতা বলে থাকি। কতগুলো যন্ত্রের সাহায্যে যদি আমরা এই অনুভূতিগুলো সৃষ্টি করতে পারি তাহলে অবস্থাটি মানুষের কাছে পুরোপুরি বাস্তব মনে হতে পারে।

এটি নানাভাবে করা সম্ভব। অনেক সময় বিশেষ ধরনের চশমা বা হেলমেট পরা হয়, যেখানে দুই চোখে দুটি ভিন্ন দৃশ্য দেখিয়ে সেই অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়। অনেক সময় একটি স্ক্রিনে ভিন্ন ভিন্ন প্রজেক্টর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য দেখিয়ে সেই অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়।

বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে ভার্চুয়াল রিয়ালিটির সাহায্য নেয়, বিশেষ করে বিনোদনের জন্য এর সাহায্য নেওয়া হয় বেশি। বিশেষ করে কম্পিউটার গেমে এর জনপ্রিয়তা বেশি। আবার যেসব ঐতিহাসিক মিউজিয়াম কিংবা যেসব জায়গায় ভ্রমণ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করে সেসব মিউজিয়াম বা জায়গায় ভ্রমণ করার অনুভূতি পাওয়া যায়। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করে বর্তমান যুগে বাইতুল মুকাদ্দাসের স্থাপনার তথ্য যে কেউ ঘরে বসে বলতে পারবে।

http://www.3dmekanlar.com/  নামক এই ওয়েবসাইটেই বাইতুল মুকাদ্দাসসহ বহু দর্শনীয় স্থান ত্রিমাত্রিক দেখার সুযোগ আছে। মহান আল্লাহর সাহায্যেই মানুষ প্রযুক্তিতে এত দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুর সম্মান রক্ষায় দেড় হাজার বছর আগে কোনো প্রযুক্তি বা যন্ত্র ছাড়াই বাইতুল মুকাদ্দাসের সব প্রয়োজনীয় তথ্য তাঁর চোখের সামনে তুলে ধরেছিলেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান।

লেখক:  সাংবাদিক, আলেম লেখক,গবেষক, খতিব ও মাদরাসা-শিক্ষক