ভারতীয় মুসলিমদের রমজান যেভাবে কাটছে
ভারতে রমজানের প্রথম দিনে পুরান দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদে জুমা পড়তে একত্রিত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান (১৬৫০ - ১৬৫৬)
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ভারত, হিন্দু প্রধান এই দেশটিতে সংখ্যালঘু হিসাবে বসবাস করছেন আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন মুসলমান।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের নতুন তথ্য অনুসারে, আগামী কয়েক দশকে ভারত ইসলাম এবং হিন্দুধর্ম পালনকারী জনসংখ্যার সর্ববৃহৎ দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। ২০৫০ সালে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৩১১ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১১ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসারে এবারের রমজানকে কিছুটা ভিন্নমাত্রায় উদযাপন করছেন দেশটির মুসলিমরা।
রমজান মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মাস, এ সময় সুবহে সাদিক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখা হয়। বেশি বেশি ইবাদত, আত্মসংযমের মাধ্যমে রবের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ভারতের মুসলমানরা কীভাবে রমজান পালন করেন তা জানতে দেশটির রাজধানী দিল্লির পুরানো মুসলিম মহল্লা, ঐতিহাসিক মসজিদ, মাদরাসা এবং বাজার পরিদর্শন করেছেন আল জাজিরার ফটোগ্রাফার আফজাল সোফি। গ্যালারিতে দেখুন কিছু দৃশ্য-
জুমার নামাজের আগে দিল্লি জামে মসজিদ মাঠের একটি পুকুরে অজু করছেন মুসল্লিরা।
নতুন দিল্লির একটি মাদরাসায় কোরআন হেফজ করছেন শিক্ষার্থীরা। দিল্লির বিভিন্ন মসজিদে তারাবি নামাজের জন্য এই শিক্ষার্থীদের পাঠানো হয়।
দিল্লি জামে মসজিদের গেটে এক ভিক্ষুককে দান করছেন একজন মুসলিম। এই মাসে মুসলমানরা দরিদ্রদের সাহায্য করাকে সওয়াবের কাজ বলে মনে করেন।
জামে মসজিদের বাইরের সুপরিচিত বাজারের একটি দৃশ্য। বাজারটির প্রতি মানুষের প্রচুর আকর্ষণ রয়েছে। কারণ পুরানো দিল্লির অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলির সাথে সংযোগ রয়েছে এই বাজারের। এখানে ঐতিহ্যবাহী এবং সুস্বাদু সব খাবার সহজেই পাওয়া যায়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে বিভিন্ন ধরনের খেজুর আমদানি করা হয়, এই মাসে বাজারগুলো খেজুরে ভরে যায়, কারণ মুসলমানরা খেজুর দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করেন।
জামে মসজিদ মার্কেটে রমজানের জন্য তৈরি বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং মিষ্টি বিক্রি করছেন একজন মুসলিম।
ইফতারের সময় মসজিদে আসা মানুষদের পরিবেশনের জন্য নয়াদিল্লির একটি মসজিদে ফল কাটছে কিছু কিশোর ছেলে। রমজান মাসে মুসলমানরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন।
দিল্লির জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে ইফতারের আগ মুহূর্তে খাবার নিয়ে আজানের অপেক্ষা করছে একটি পরিবার। পরিবারটি আল জাজিরাকে জানিয়েছে, তারা প্রতি বছর রমজানের প্রথম দিন এখানে ইফতার করেন। এটা তাদের কাছে একটি বিশেষ মুহূর্ত।
নয়াদিল্লির একটি মসজিদে একসঙ্গে অনেকের ইফতারের দৃশ্য। দিল্লির প্রায় সব মসজিদে মাগরিবের আগে সাধারণ মুসলমানদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়।
প্রতিদিন শত শত মানুষ তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করতে আসেন দিল্লির জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে।
জামে মসজিদ বাজারে রমজানে জনপ্রিয় বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী রুটি বিক্রি করছেন একজন দোকানদার।
জামে মসজিদের বাইরের বাজারে একজন দোকানের মালিক দরিদ্র ও গৃহহীন লোকেদের বিরিয়ানি বিতরণ করছেন। রমজানে দরিদ্রদের খাবার বিতরণের জন্য স্থানীয়রা রেস্তোঁরাগুলোতে অর্থ প্রদান করে থাকেন। কারণ রমজান মাসে দানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করা হয়।
জামে মসজিদের বাইরের বাজারে শরবত-ই-মহব্বত (প্রেমের একটি পানীয়) নামে পরিচিত একটি ঐতিহ্যবাহী মিল্কশেক প্রস্তুত করছেন এক ব্যক্তি, যা দুধ এবং ফল দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। দিল্লিতে তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষজন ইফতারের সময় গরম পানীয়ের তুলনায় শীতল পানীয় পছন্দ করেন।
জামে মসজিদ বাজারে চিকেন ফ্রাই এবং কাবাব তৈরি করছেন কয়েকজন কর্মচারী।
সূত্র : আল-জাজিরা
এনটি