হজে যে দুই ওয়াক্ত নামাজ একসঙ্গে পড়া হয়
প্রতীকী ছবি
প্রত্যেক মুসলিমের জন্য সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, নামাজ মুমিনীনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে। (সূরা নিসা, আয়াত ১০৩)
কখনো নামাজ কাজা হয়ে গেলে একত্রে কয়েক ওয়াক্ত কাজা নামাজ আদায় করা যায়। তবে সময় হওয়ার আগে কোনও নামাজ বা এক ওয়াক্তের নামাজের সঙ্গে পরবর্তী যে নামাজের সময় এখনো হয়নি তা আদায় করা জায়েজ নেই। কিন্তু হজের সফরে হাজীদের জন্য আরাফার ময়দানে জোহর এবং আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করতে হয়। একইসঙ্গে মুজদালিফায় যাওয়ার পর মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
আরাফাত ময়দানে জোহরের সময় জোহর এবং আসর একত্রে আদায় করাকে ‘জময়ে তাকদীম’ বলা হয়। আর মুজদালিফায় এশার সময় মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করাকে ‘জময়ে তাখীর’ বলা হয়।
এই দুই স্থানে দুই ওয়াক্তের নামাজ একসঙ্গে পড়া সম্পূর্ণ শরিয়তসম্মত এবং তা সহিহ হাদিসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত। আরাফাত ও মুজদালিফায় হজ আদায়কারীরা মুসাফির অবস্থায় থাকেন বিধায় ‘জময়ে তাকদীম’ এবং ‘জময়ে তাখীর’ করা তাদের জন্য সম্পূর্ণ জায়েজ ও বৈধ।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফা এবং মুজদালিফায় এই দুই ওয়াক্তের নামাজ এভাবে আদায় করেছেন। হজ করতে যাওয়া প্রত্যেকের জন্য নবীজির অনুসরণ আবশ্যক।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজ সম্পর্কে হজরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আজান এবং দুই একামতে আরাফাত ময়দানে জোহর এবং আসরের নামাজ এবং মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেছিলেন। (সহিহ মুসলিম : কিতাবুল হজ্জ, বাবু হাজ্জাতিন নাবিয়্যি সা., খন্ড ২, পৃ. ৮৮৬, ৮৯২, বর্ণনা সংখ্যা ১২১৭)
ইমাম জাফর সাদিক রা. তার বাবা ইমাম মোহাম্মদ বাকের রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে এক আজান ও দু’একামতের সাথে জোহর এবং আসর নামাজ পড়িয়েছিলেন এবং এই দু’য়ের মধ্যে কোনো তাসবিহ পাঠ করেননি। আর মুজদালিফায় এক আজান এবং দু’একামতের সাথে মাগরিব এবং এশার নামাজ পড়িয়েছেন এবং এগুলোর মধ্যে কোনো তাসবিহ পাঠ করেননি। (সুনানে আবু দাউদ : কিতাবুল মানাসিক, বাবু সীফাতি হাজ্জাতিন নাবিয়্যি সা., খন্ড ২, পৃ. ১৮৬, বর্ণনা সংখ্যা ১৯০৬)
হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে সর্বদা সময়মতো নামাজ আদায় করতে দেখেছি। মুজদালিফায় মাগরিব এবং এশার দুই নামাজ ছাড়া। তিনি এই দুই নামাজ একত্রে আদায় করেছেন। (সহিহ মুসলিম : কিতাবুল হাজ্জ, বাবু এস্তেহবাবি যিয়াদাতিত তাগলিসে ফি ছালাতিস সুবহি ইয়াওমান নাহরি বিল মুজদালিফাতি, খন্ড ২, পৃ. ৯৩৮, বর্ণনা সংখ্যা ১২৮৯)
তবে কেউ যদি আরাফ বা মুজদালিফা পৌঁছার আগে এবং এশার ও জোহরের সময় হওয়ার পূর্বেই জময়ে তাকদীম বা তাখীরের নামাজ আদায় করে তাহলে তা জায়েজ হবে না। এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক, ইমাম আবু ইউসুফ, আবু সওর, ইবনুল মুনযির, সুফিয়ান সওরী ও ইমাম আবু হানীফা রহ.।
এনটি