প্রতীকী ছবি

পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পবিত্র কাবা তাওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন—সুরা হজের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে ও তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের।’ (সুরা হজ: ২৯)

একইভাবে সুরা হজেও মহান আল্লাহ তাওয়াফকারীদের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, নামাজ কায়েমকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য।’ (সুরা হজ: ২৬)

তাউস (রহ.) থেকে বর্ণিত, এমন এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যিনি নবী (স.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন, তিনি বলেন, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করাও সালাতের মতো। অতএব কথা কমই বলবে। (নাসায়ি: ২৯২২)

সঠিকভাবে পবিত্র বায়তুল্লাহর তাওয়াফে দাস মুক্ত করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায় এবং প্রতি কদমে কদমে সওয়াব হয়। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করল এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ল, তা একটি ক্রীতদাসকে দাসত্বমুক্ত করার সমতুল্য।’ (ইবনে মাজাহ: ২৯৫৬)

কাবা ঘর তাওয়াফের সময় অনেকেই কিছু ভুলভ্রান্তি করে থাকে। এসব ভুলভ্রান্তি থেকে দূরে থাকা জরুরি। ভুলগুলো হলো-

তাওয়াফে নির্দিষ্ট দোয়াকে জরুরি মনে করা

তাওয়াফের প্রতি চক্করের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট দোয়া পড়াকে জরুরি মনে করে। ফলে নির্দিষ্ট ঐ দোয়া শেষ হয়ে গেলে অন্য দোয়া পড়ে না। নির্দিষ্ট দোয়াটি নিজের মুখস্থ না থাকলে অন্যের সাহায্য নেয়। এ ধারণা ভুল। 

তাওয়াফ অবস্থায় নির্দিষ্ট দোয়া পড়া জরুরি নয়। রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনিয়া হাসানাহ... ’ এই দোয়া পড়া উত্তম। এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। 

এ ছাড়া পুরো তাওয়াফে মাছূর দোয়া তথা কুরআন-হাদিস বা সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত যে কোনো দোয়াই পড়া যেতে পারে। এমনিভাবে অন্য যে কোনো ভালো অর্থবোধক দোয়াও পড়া যেতে পারে। দোয়া আরবীতে করাও জরুরি নয়। নিজের ভাষায় করা যেতে পারে।

জামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করা 

অনেকে জামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করে এবং জামাতের মধ্যে একজন মুখস্থ বা দেখে দেখে উঁচু আওয়াজে দোয়া পড়ে আর তার সঙ্গে পুরো জামাত সমস্বরে দোয়া পড়তে থাকে। 

এ নিয়মে একাধিক আপত্তিকর বিষয় রয়েছে- (ক) সমস্বরে দলবদ্ধভাবে দোয়া পড়ার কারণে অন্যদের একাগ্রতা বিঘিœত হয়। (খ) এভাবে দোয়া পড়া-পড়ানোর রেওয়াজ সালাফ থেকে প্রমাণিত নেই। এ জন্যও তা ত্যাগ করা দরকার। (গ) আরো একটি বড় ক্ষতি হলো, দলবদ্ধভাবে চলার কারণে মাতাফে ভিড় সৃষ্টি হয়। অন্যদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে। এতে অন্যদের ভীষণ কষ্ট হয়। অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা খারাপ।

যদি সকলেই নিজে নিজে চলত এবং দেখে দেখে দোয়া না পড়ত, যা মুখস্থ আছে তা-ই পড়ত তাহলে মাতাফে হঠাৎ যে চাপ সৃষ্টি হয় তা অনেক কমে যেত এবং সকলেই একাগ্রতার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে নিমগ্ন থেকে দোয়া ও তাওয়াফ করতে পারত। - ইলাউস সুনান ১০/৮২।

পুরো তাওয়াফে রমল করা

অনেককে দেখা যায়, তাওয়াফের ৭ চক্করেই রমল করে থাকে। আবার কেউ কেউ নফল তাওয়াফেও রমল করে। মনে করে, রমল সকল তাওয়াফে এবং তাওয়াফের সব চক্করেই করতে হয়। অথচ এটি ভুল। রমল শুধু ওই তাওয়াফেই করতে হয়, যে তাওয়াফের পর সায়ী আছে। আর এই তাওয়াফেরও সব চক্করে নয়, শুধু প্রথম তিন চক্করে।

অন্যকে কষ্ট দিয়ে রমল করা

রমল করা সুন্নত। মাতাফে কোনো কোনো সময় অস্বাভাবিক ভিড় হয়। বিশেষ করে হজের আগে দু-এক দিন এবং যিলহজের ১০-১১ তারিখে। তখন মাতাফে চলাই মুশকিল হয়। সামান্য নড়াচড়ার প্রভাব পড়ে অনেক দূর পর্যন্ত। কিন্তু আশ্চর্য হলো, ওই কঠিন ভিড়েও কাউকে কাউকে রমল করতে দেখা যায়। এতে নিজেরও প্রচুর কষ্ট হয়।

বিশাল জনসমুদ্রকেও কষ্ট দেয়া হয়। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, রমলটা তাওয়াফের ফরজ অংশ।

এজন্যই বুযুর্গগণ বলেন, ‘যথাযথ হজ করতে হলে সামান্য ইলম যথেষ্ট নয়; বরং প্রচুর ইলম এবং তার সঙ্গে অনেক বেশি আকলের প্রয়োজন।’

রমল ছাড়াও তাওয়াফ আদায় হয়ে যায়। তাই প্রচন্ড ভিড়ে অন্যকে কষ্ট দিয়ে রমল করা যাবে না; বরং তখন স্বাভাবিকভাবে চলবে। চলতে চলতে কখনো সামান্য ফাঁকা পেলে এবং অন্যের কষ্ট না হলে স্বাভাবিক গতিতে রমলের চেষ্টা করবে। -সহিহ মুসলিম ১/৪১০।

মহিলাদের রমল 

রমল শুধু পুরুষের জন্য। এ বিধানটি মহিলাদের জন্য নয়। কিন্তু কখনো কখনো মহিলাদেরকেও তা করতে দেখা যায়। এটি ভুল। - মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদিস : ১৩১১০।

এনটি