ছবি : সংগৃহীত

তিন বছর আগে নামাজের জন্য আবারও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় আসা সোফিয়া। নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেবার পর থেকে আয়া সোফিয়ায় দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বেড়েছ। এই সময়ের মধ্যে মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন দুই কোটি লাখ (২১ মিলিয়ন) মানুষ। 

সোমবার (২৪ জুলাই) ছিল মসজিদটির তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন হয়েছে। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মসজিদটিতে ফজর নামাজের ইমামতি করেন তুরস্কের ধর্মবিষয়ক প্রধান ড. আলী ইরবাশ। এ সময় নামাজে উপস্থিত ছিলেন ইস্তাম্বুলের গভর্নর দাউদ গুলসহ অসংখ্য মুসল্লি।

মুসলমানরা ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগ পর্যন্ত ৯১৬ বছর ধরে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এরপর ১৪৫৩ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শ’ বছর স্থাপনাটি মসজিদ ছিল। তবে ৮৬ বছর মসজিদটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

২০২০ সালের ১০ জুলাই তুরস্কের একটি আদালত ১৯৩৪ সালের মন্ত্রিসভার একটি ডিক্রি বাতিল করেছে, যার ফলে ৮৬ বছর পর আয়া সোফিয়া জাদুঘর থেকে মসজিদে ফিরিয়ে আনা হয়।

এরপর ২৪ জুলাই আয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদ হিসাবে তার আগের গৌরব পুনরুদ্ধার করে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান মসজিদের ভেতরে ৮৬ বছর পর প্রথম শত শত মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন।

আয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম বিনয়ামিন তুবজি উগলু জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ২৪ জুলাই করোনা মহামারির সময় ঐতিহাসিক স্থাপনাটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। সেই দিন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের উপস্থিতিতে  ৮৬ বছর পর এখানে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন এখানে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ইমাম বিনয়ামিন আরো জানান, ২০২১ সালে ১৩ লাখ লোক আয়া সোফিয়া পরিদর্শন করেন। ২০২২ সালে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল এক কোটি ৩৬ লাখ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬০ লাখ লোক তা পরিদর্শন করেন। অর্থাৎ ঐতিহাসিক এ স্থাপনার দর্শনার্থী সংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ ও এশিয়ার সব দেশের পর্যটকদের কাছে তা খুবই জনপ্রিয়।

তিনি আরো জানান, উসমানীয় শাসনকাল থেকে আয়া সোফিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা চলে আসছে। এর মধ্যে শবেকদর, শবেমেরাজসহ ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা উল্লেখযোগ্য। তুরস্কের ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তর, ইস্তাম্বুলের দারুল ইফতা ও মসজিদের খতিব এবং ইমামদের সহযোগিতায় এসব রীতি পুনরায় চালু করা হচ্ছে। তা ছাড়া মসজিদ হওয়ার পর থেকে আয়া সোফিয়া প্রাঙ্গণে কোরআন, ফিকাহ, তাফসির, হাদিসবিষয়ক অসংখ্য দরস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত তিন বছরে এখানে ১২০ ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। 

২০২২ ও ২০২৩ সালে আয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শনে ইন্দোনেশিয়ার দর্শনার্থীরা শীর্ষে রয়েছেন। কারণ তাদের অধিকাংশ হজযাত্রী সৌদি আরব যাওয়ার পথে ইস্তাম্বুলে বিরতি নেন এবং আয়া সোফিয়া দেখতে আসেন।

আয়া সোফিয়ার নির্দিষ্ট একটি অংশ মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফজর থেকে এশার নামাজ পর্যন্ত তা সব মুসল্লির জন্য উন্মুক্ত থাকে। বিশ্বের অন্যান্য মসজিদ পরিদর্শনের মতো এখানকার দর্শকদেরও শালীন পোশাক পরতে হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে মসজিদ কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করে থাকে।

সূত্র : ডেইলি সাবাহ

এনটি