প্রতীকী ছবি

ইলম, জ্ঞান, জানাশোনা- বান্দার প্রতি আল্লাহর প্রথম উপহার। আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পরই আল্লাহ তায়ালা তাকে সব বিষয়ের জ্ঞান শিক্ষা দেন এবং ইলমকেই ফেরেশতাদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসেবে সাব্যস্ত করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি আদমকে নামগুলো সব শিক্ষা দিলেন তার পর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ৩১) 

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সূরা রহমান, ৩-৪)

মানুষের এই জানাশোন বা জ্ঞান আমলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমল করো, অচিরেই তোমাদের আমলগুলো প্রদর্শন করা হবে।’ (সূরা তাওবা, আয়াত, ১০৫)

জানাশোনা বা ইলম অনুযায়ী আমল না করার পরিণাম ভয়াবহ শাস্তি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বক্তব্য অনুযায়ী আমল না করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ।’ (সূরা সফ, আয়াত, ৩)

যে ব্যক্তি জানাশোনার পরও আমল করবে না, তাকে কিয়ামতের দিন কঠিন জবাবদিহীতা করতে হবে।  এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার পদযুগল সরবে না, যে পর্যন্ত না তাকে পাঁচটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হবে, তন্মধ্যে একটি হলো, তার জ্ঞান অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে?’ (তিরমিজি, হাদিস, ২৪১৭) 

আরেক হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তার পর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামিরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদের ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদের ভালো কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে করতাম না। আর খারাপ কাজের নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম। (বুখারি)

জানাশোনা বা ইলম অনুযায়ী আমল না করা আল্লাহর ক্রোধের কারণ এবং এটি ইহুদিদের চরিত্র। তাই সূরা ফাতিহার মধ্যে ইহুদিদেরকে ‘আল্লাহর ক্রোধের শিকার’ বলা হয়েছে। কেননা তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত আসমানি কিতাব তাওরাতের জ্ঞান রাখত; কিন্তু সে অনুযায়ী আমল করত না। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের সন্তানের মতো করে চিনত; কিন্তু তার পরও তাকে স্বীকার করেনি।’ (সূরা আনআম : ২০)

আমলহীনতা থেকে বাঁচতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে এই দোয়াটি পড়তেন। বলতেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার কাছে আশ্রয় চাই এমন জ্ঞান থেকে যা উপকারে আসে না, এমন অন্তর থেকে যা ভীত হয় না, এমন আত্মা থেকে যা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে যা কবুল হয় না।’ (তারগীব, হাদিস, ১২৪)

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেন, ‘মেরাজের রাতে আমি একদল মানুষের পাশ দিয়ে গেলাম। যাদের ঠোঁটগুলো আগুনের কেঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বলেছেন, এরা আপনার উম্মতের বক্তাশ্রেণী। তারা এমন কথা বলতো যা নিজেরা আমল করতো না।’ (বুখারী ও মুসলিম)

এনটি