প্রতীকী ছবি

জীবন ধারণের জন্য খাবার খাওয়া জরুরি। খাবার না খেয়ে কেউ বাঁচতে পারে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান কর। পানাহার কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ, আয়াত, ৩১)

প্রয়োজনের তাগিদে কখনো একা খাবার খাওয়া হয়। আবার কখনো কখনো অনেকেই মিলে একসঙ্গে খেতে বসেন। কখনো অনেকে একসঙ্গে খেতে বসলে, খাবার পরিবেশ আনন্দদায়ক ও সবার উপযোগী রাখার কিছু নিয়ম তুলে ধরা হলো, মুসলিম মনীষী ইমাম গাজালী রহিমাহুল্লাহর এহইয়াউ উলুমিদ্দীন কিতাব থেকে।

তিনি বলেছেন, অনেকে একসঙ্গে খেতে বসলে সাতটি বিষয় খেয়াল রাখা যেতে পারে। এতে করে খাবারের পরিবেশ হয়ে উঠবে আনন্দদায়ক ও সবার জন্য স্বস্তির।

বয়স্ক-মান্যগণ্য ব্যক্তিদের প্রাধান্য

অনেকে একসঙ্গে খেতে বসলে উত্তম হচ্ছে বয়স্ক এবং মান্যগণ্য ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া। তাদের আগে খাওয়া শুরু না করা উত্তম। তবে অনেকের মাঝে যিনি গণ্যমান্য ও অনুসৃত সবাইকে নিয়ে তার খাওয়া শুরু করা উচিত। সঙ্গের মানুষদের বেশিক্ষণ অপেক্ষায় রাখা ঠিক নয়।

প্রাণচাঞ্চল্য ধরে রাখা

খাওয়ার সময় চুপচাপ বসে খাওয়া জরুরি নয়। ভালো কথাবার্তা বলা যেতে পারে। সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে।

সঙ্গীকে খেতে উৎসাহিত করা

খাবার সময় সঙ্গীর প্রতি নম্রতা দেখানো উচিত। সঙ্গীকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সঙ্গী কম খেলে তাকে খেতে উৎসাহিত করা উচিত।

হজরত ইবনে মোবারক উৎকৃষ্ট মানের খোরমা বন্ধুদের সামনে রাখতেন এবং বলতেন, যে বেশি খাবে তাকে প্রত্যেক বীচিতে এক দেরহাম হিসেবে পুরস্কৃত করবো। এরপর তিনি গণনা করে যে যত পরিমাণ খেয়েছে তাকে সেই অনুপাতে দেরহাম দিতেন। সংকোচ দূর এবং খাবারে প্রফুল্লতার জন্য তিনি এমন করতেন।

হজরত ইমাম জাফর রহ. বলেন, আমার বন্ধুদের মধে সেই আমার কাছে বেশি প্রিয় যে অধিক খায়। আর আমার কাছে তাকে বোঝা মনে হয়, যার খাওয়ার ব্যাপারে আমাকে দেখাশোনা করতে হয়। তিনি আরও বলতেন, অন্যের সাথে মানুষের মহব্বত তখন ভালোভাবে জানা যায়, যখন সে তার ঘরে গিয়ে নিঃসঙ্কোচে খায়।

পছন্দের জিনিস আগ্রহ নিয়ে খাওয়া

অন্য কেউ দেখছে বলে নিজের পছন্দের জিনিস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। এটা এক ধরণের লৌকিকতা। তবে যদি সঙ্গীকে কোনো কিছু খাওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য কেউ কম খায় তাহলে এমন করা যেতে পারে। একইভাবে অন্যকে সহযোগিতা করার জন্য এবং অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য কেউ বেশি খেতে চাইলে তা উত্তম।

প্লেটে হাত ধোয়া

প্লেটে হাত ধোয়া দোষের কিছু নয়। তবে অনেকে একসঙ্গে খেতে বসলে এমন করা উচিত নয়।

সঙ্গী লজ্জা পায় এমন কিছু না করা

সঙ্গে যিনি খেতে বসেছেন তার খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়। এমন করার কারণে সঙ্গী লজ্জা পেতে পারেন। খাবার খেতে বসে কেউ সবার আগে উঠে গেলে অন্যরা যদি খেতে দ্বিধা করে তাহলে সবার আগে তার উঠে যাওয়া উচিত নয়। বরং বসে থেকে অল্প অল্প করে খেতে থাকবে। আর কোনো কারণ বশত খেতে না পারলে সবার সামনে বলে দেওয়া উচিত, যেন অন্যরা খেতে লজ্জা না পায়।

অন্যের কষ্ট হয় এমন কিছু না করা

খেতে বসে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যা অন্যের কাছে খারাপ লাগে। যেমন- প্লেটে হাত ঝাড়া, লোকমা নেওয়ার সময় প্লেটের ওপর ঝুঁকে পড়া। মুখ থেকে কোনো কিছু বের করতে হলে খাবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বাম হাতে বের করা উচিত।

এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, ২য়-খণ্ড, ২১০

এনটি