সূরা মুতাফফিফীনের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
সূরা মুতাফফিফীন পবিত্র কোরআনের ৮৩ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৩৬। সূরাটি পবিত্র কোরআনের ৩০ তম পারায় অবস্থিত।
সূরা মুতাফফিফীনের শানে নুযুল
বিজ্ঞাপন
এই সূরার বর্ণনাভঙ্গী ও বিষয়বস্তু থেকে বুঝা যায় , এটি মক্কায় প্রথম দিকে নাজিল হয়। সে সময় আখেরাত বিশ্বাসকে মক্কাবাসীদের মনে পাকা-পোক্তভাবে বসিয়ে দেবার জন্য একের পর এক সূরা নাজিল হচ্ছিল। সূরাটি ঠিক তখনই নাজিল হয় যখন মক্কার লোকেরা পথে-ঘাটে-বাজারে-মজলিসে-মাহফিলে মুসলমানদের নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করছিল এবং তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করছিল। তবে জুলুম, নিপীড়ন ও নির্যাতন তখনো শুরু হয়নি।
তবে কোনো কোনো মুফাসসির এই সূরাকে মদীনায় অবতীর্ণ বলেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় তশরীফ আনেন, তখন মদীনাবাসীদের সাধারণ কাজ করবার ‘কাইল’ তথা মাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হত। তারা এ ব্যাপারে চুরি করা ও কম মাপায় খুবই অভ্যস্ত ছিল। এর প্রেক্ষিতে সূরা আল-মুতাফফিফীন নাজিল হয়। এই সূরা নাজিল হওয়ার পর তারা এই বদ-আভ্যাস থেকে বিরত হয় এবং এমন বিরত হয় যে, আজ পর্যন্ত তাদের সুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। (নাসায়ি, আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস, ১১৫৯০, ইবনে মাজহ, হাদিস, ২২২৩)
বিজ্ঞাপন
সূরা মুতাফফিফীন
وَیۡلٌ لِّلۡمُطَفِّفِیۡنَ ۙ ١ الَّذِیۡنَ اِذَا اکۡتَالُوۡا عَلَی النَّاسِ یَسۡتَوۡفُوۡنَ ۫ۖ ٢ وَاِذَا کَالُوۡہُمۡ اَوۡ وَّزَنُوۡہُمۡ یُخۡسِرُوۡنَ ؕ ٣ اَلَا یَظُنُّ اُولٰٓئِکَ اَنَّہُمۡ مَّبۡعُوۡثُوۡنَ ۙ ٤ لِیَوۡمٍ عَظِیۡمٍ ۙ ٥ یَّوۡمَ یَقُوۡمُ النَّاسُ لِرَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ؕ ٦ کَلَّاۤ اِنَّ کِتٰبَ الۡفُجَّارِ لَفِیۡ سِجِّیۡنٍ ؕ ٧ وَمَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا سِجِّیۡنٌ ؕ ٨ کِتٰبٌ مَّرۡقُوۡمٌ ؕ ٩ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ۙ ١۰ الَّذِیۡنَ یُکَذِّبُوۡنَ بِیَوۡمِ الدِّیۡنِ ؕ ١١ وَمَا یُکَذِّبُ بِہٖۤ اِلَّا کُلُّ مُعۡتَدٍ اَثِیۡمٍ ۙ ١٢ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡہِ اٰیٰتُنَا قَالَ اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ ؕ ١٣ کَلَّا بَلۡ ٜ رَانَ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ مَّا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ ١٤ کَلَّاۤ اِنَّہُمۡ عَنۡ رَّبِّہِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ ؕ ١٥ ثُمَّ اِنَّہُمۡ لَصَالُوا الۡجَحِیۡمِ ؕ ١٦ ثُمَّ یُقَالُ ہٰذَا الَّذِیۡ کُنۡتُمۡ بِہٖ تُکَذِّبُوۡنَ ؕ ١٧ کَلَّاۤ اِنَّ کِتٰبَ الۡاَبۡرَارِ لَفِیۡ عِلِّیِّیۡنَ ؕ ١٨ وَمَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا عِلِّیُّوۡنَ ؕ ١٩ کِتٰبٌ مَّرۡقُوۡمٌ ۙ ٢۰ یَّشۡہَدُہُ الۡمُقَرَّبُوۡنَ ؕ ٢١ اِنَّ الۡاَبۡرَارَ لَفِیۡ نَعِیۡمٍ ۙ ٢٢ عَلَی الۡاَرَآئِکِ یَنۡظُرُوۡنَ ۙ ٢٣ تَعۡرِفُ فِیۡ وُجُوۡہِہِمۡ نَضۡرَۃَ النَّعِیۡمِ ۚ ٢٤ یُسۡقَوۡنَ مِنۡ رَّحِیۡقٍ مَّخۡتُوۡمٍ ۙ ٢٥ خِتٰمُہٗ مِسۡکٌ ؕ وَفِیۡ ذٰلِکَ فَلۡیَتَنَافَسِ الۡمُتَنَافِسُوۡنَ ؕ ٢٦ وَمِزَاجُہٗ مِنۡ تَسۡنِیۡمٍ ۙ ٢٧ عَیۡنًا یَّشۡرَبُ بِہَا الۡمُقَرَّبُوۡنَ ؕ ٢٨ اِنَّ الَّذِیۡنَ اَجۡرَمُوۡا کَانُوۡا مِنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا یَضۡحَکُوۡنَ ۫ۖ ٢٩ وَاِذَا مَرُّوۡا بِہِمۡ یَتَغَامَزُوۡنَ ۫ۖ ٣۰ وَاِذَا انۡقَلَبُوۡۤا اِلٰۤی اَہۡلِہِمُ انۡقَلَبُوۡا فَکِہِیۡنَ ۫ۖ ٣١ وَاِذَا رَاَوۡہُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّ ہٰۤؤُلَآءِ لَضَآلُّوۡنَ ۙ ٣٢ وَمَاۤ اُرۡسِلُوۡا عَلَیۡہِمۡ حٰفِظِیۡنَ ؕ ٣٣ فَالۡیَوۡمَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنَ الۡکُفَّارِ یَضۡحَکُوۡنَ ۙ ٣٤ عَلَی الۡاَرَآئِکِ ۙ یَنۡظُرُوۡنَ ؕ ٣٥ ہَلۡ ثُوِّبَ الۡکُفَّارُ مَا کَانُوۡا یَفۡعَلُوۡنَ ٪ ٣٦
আরও পড়ুন
সূরা মুতাফফিফীনের বাংলা উচ্চারণ :
১. ওয়াই লুললিল মুতাফীফীন।
২. আল্লা-যীনা ইযাক্ব-তালূ-আলান্নাছি- ইয়াস্তাওফূন।
৩. ওয়া-ইযা-কা-লূহুম আও-ওয়াযানূ হুম ইউখছিরুন।
৪.আলা-ইয়াজুন্নু উলা-য়িকা আন্নাহুম মাবঊ’ছূন।
৫. লি-ইয়াওমিন আজীম।
৬. ইয়াওমা ইয়াকুমুন্নাছু লিরব্বিল আ-লামীন।
৭. কাল্লা ইন্না কিতাবাল ফুজ্জারি লাফী সিজ্জ্বীন।
৮. ওয়ামা- আদরা-কামা সিজ্জ্বীন।
৯. কিতা-বুম্ মারক্বুম।
১০. ওয়াই লুঁই ইয়াওমা-ইযিললিল মুকাযযিবীন।
১১. আল্লা-যীনা ইয়ুকায্যিবূনা বিইয়াওমিদ্দীন্।
১২. ওয়ামা-ইয়ুকায্যিবু বিহী ইল্লা কুল্লু মু’তাদিন আছীম।
১৩. ইযা তুতলা- ‘আলাইহি আ-ইয়াতুনা ক্বালা আসাত্বীরুল আওয়্যালীন।
১৪. কাল্লা বাল্ রনা ‘আলা কুলূবিহিম্ মা-কানূ ইয়াকছিবূন।
১৫. কাল্লা ইন্নাহুম আররা-ব্বিহিম্ ইয়াওমায়িযিল্ লামাহজুরবূন্।
১৬. ছুম্মা ইন্নাহুম্ লা-ছো-লুল্ জ্বাহীম্।
১৭. ছুম্মা ইয়ুক্বালু হাযাল্ লাযী কুন্তুম্ বিহী তুকায্যিবূন।
১৮. কাল্লা ইন্না-কিতাবাল আবরারি লাফী ইল্লিয়্যীন।
১৯. ওয়ামা- আদরাকামা ইল্লিইয়ূন।
২০. কিতাবুম্ মারক্বুম।
২১. ইয়াশ-হাদুহুল মুক্বাররাবুন।
২২. ইন্নাল্ আবরারি লাফী না‘ঈম।
২৩. আলাল্ আর-য়িকি ইয়ান্জুরূন।
২৪. তা’রিফূ ফী উজু হিহিম্ নাদরতান্ না‘ঈম্।
২৫. ইয়ুছ-কাওনা মির রহীক্বিম মাখতুম।
২৬. খিতা-মুহূ মিছক- ওয়াফী যা-লিকা ফাল-ইয়াতানা-ফাসিল মুতানা-ফিসূন্।
২৭. ওয়া-মিঝা-জুহু- মিন তাসনীম।
২৮. আইনাই ইয়াশ-রবু বিহাল মুক্বাররাবুন।
২৯.ইন্নাল্লাযীনা আজরমূ কা-নূ মিনাল্লাযীনা আ-মানূ ইয়াদ্ব্হাকূন্।
৩০. ওয়া-ইযা-মাররু বিহিম্ ইয়াতাগামাযূন।
৩১. ওয়া-ইয়ান-ক্বলাবূ, ইলা-আহলি-হিমুন ক্বলাবূ ফাকিহীন।
৩২. ওয়াইয়া- রাআওহুম- ক্বলূ ইন্না হা-উলায়ি লাদ্বোয়া-ল্লূন।
৩৩. ওয়ামা-উরছিলু আলাইহিম হাফিজীন।
৩৪. ফাল-ইয়াওমা-ল্লাযীনা আমানূ মিনাল কুফ্ফারি ইয়াদ্ব্হাকূন।
৩৫. আলাল- আরয়িকি ইয়ান্জুরূন।
৩৬. হাল-ছুওয়িবাল কুফ্ফারু মা-কানূ ইয়াফ-আলূন।
সূরা মুতাফফিফীনের বাংলা অর্থ :
বহু দুর্ভোগ আছে তাদের, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের নিকট থেকে যখন মেপে নেয়, পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন অন্যকে মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কমিয়ে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তাদেরকে জীবিত করে ওঠানো হবে? এক মহা দিবসে। যে দিন সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে। কখনই এটা সমীচীন নয়। নিশ্চয়ই পাপিষ্ঠদের আমলনামা আছে সিজ্জীনে। তুমি কি জান ‘সিজ্জীন’ (-এ রক্ষিত আমলনামা) কী? তা এক লিপিবদ্ধ দফতর।
সে দিন অনেক দুর্ভোগ আছে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। যারা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করে। সে দিনকে অস্বীকার করে প্রত্যেক এমন লোক, যে সীমালঙ্ঘনকারী গুনাহগার।
তার সামনে আমার আয়াত পড়া হলে সে বলে এসব তো অতীত লোকদের কিসসা-কাহিনী। কখনও নয়! বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে। কখনও নয়! বস্তুত তারা সে দিন তাদের প্রতিপালকের দীদার (দর্শন) থেকে বঞ্চিত থাকবে। তারপর তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। তারপর বলা হবে, এটাই সেই বস্তু, যাকে তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করতে।
জেনে রেখ, পুণ্যবানদের আমলনামা থাকে ইল্লিয়্যীনে। তুমি কি জান ইল্লিয়্যীন (-এ রক্ষিত আমলনামা) কী? তা এক লিপিবদ্ধ দফতর। যা দেখে (আল্লাহর) সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ। নিশ্চয়ই পুণ্যবানগণ থাকবে প্রভূত নেয়ামতের মধ্যে। আরামদায়ক আসনে বসে অবলোকন করতে থাকবে। তাদের চেহারায় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবে। তাদেরকে পান করানো হবে বিশুদ্ধ পানীয়, যাতে মোহর করা থাকবে। তার মোহর হবে কেবল মিস্ক। এটাই এমন জিনিস, লুব্ধজনদের উচিত এর প্রতি অগ্রগামী হয়ে লোভ প্রকাশ করা। সে পানীয়ে ‘তাসনীম’-এর পানি মেশানো থাকবে। তা একটি প্রস্রবণ, যা থেকে আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত বান্দাগণ পানি পান করে।
নিশ্চয়ই যারা অপরাধে লিপ্ত ছিল তারা মুমিনদের নিয়ে হাসত। যখন তাদের কাছ দিয়ে যেত, তখন একে অন্যকে চোখ টিপে ইশারা করত। যখন নিজ পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যেত তখন ফিরত হর্ষোৎফুল্ল হয়ে। এবং যখন তাদেরকে (অর্থাৎ মুমিনদেরকে) দেখত, তখন বলত, নিশ্চয়ই এরা পথভ্রষ্ট। অথচ তাদেরকে মুমিনদের তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠানো হয়নি। তার পরিণাম এই যে, আজ মুমিনগণ কাফেরদেরকে নিয়ে হাসবে। আরামদায়ক আসনে বসে দেখবে। যে, কাফেরগণ বাস্তবিকই তাদের কৃতকর্মের ফল পেয়ে গেছে। (সূরা মুতাফফিফীন, আয়াত : ১-৩৬)