ঐতিহাসিক মিসর রোড : বিমান-জাহাজের আগে হাজিদের পদচারণায় মুখরিত হতো এ পথ
মুসলিম বিশ্ব ও আরব উপদ্বীপকে সংযুক্তকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হজ ও বাণিজ্যপথ হিসেবে স্বীকৃত ঐতিহাসিক মিশরীয় হজ রোড। ইতিহাসবিদ ও পরিব্রাজকদের দৃষ্টিতেও এই পথটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই ব্যবহৃত এই রুট শুধু ধর্মীয় তাৎপর্যই বহন করে না, বরং এটি একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক, সভ্যতাগত ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের ধারক।
বিজ্ঞাপন
এই পথের গুরুত্বের কারণে এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ টেন্টেটিভ লিস্টে যুক্ত হয়েছে, যা মূল তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রথম ধাপ।
২০১৫ সালে সৌদি আরব এই পথকে ইউনেস্কোর কাছে প্রস্তাব করে, যেখানে উল্লেখ করা হয়—এই রুট মিশরকে মক্কা ও মদিনার সঙ্গে যুক্ত করে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
প্রস্তাবে বলা হয়, মিশর, সুদান, মধ্য আফ্রিকা, মরক্কো, আন্দালুসিয়া ও সিসিলি থেকে আগত হাজিরা এই পথ ব্যবহার করতেন। তারা মিশরে মিলিত হয়ে সাইনাই হয়ে আকাবা পেরিয়ে দুইটি পথ দিয়ে যাত্রা করতেন।
এই রাস্তা আকাবা উপসাগরের হাকেল শহর থেকে শুরু হয়ে মক্কায় গিয়ে শেষ হয়।
ইতিহাসজুড়ে নির্মিত হয়েছিল নানা কাঠামো
বিভিন্ন মুসলিম শাসক এই পথে পুকুর, খাল, কূপ, বাঁধ, সেতু, দুর্গ ও মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়া হাজিদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাস্তার পাশে বিভিন্ন ইসলামিক শিলালিপি ও লেখা আজও দেখতে পাওয়া যায়।
অনেকে দান-সদকার মাধ্যমে অন্যান্য হাজিদের হজযাত্রা সহজ করেছেন। ধনীদের সহায়তায় ক্যারাভান সরাই, পানির ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হতো।
চারটি যুগে বিভক্ত হজ রোডের ইতিহাস
১. প্রথম যুগ (১১৫০ সাল থেকে) : সমুদ্র ও স্থল—দুই পথেই যাতায়াত হতো।
২. দ্বিতীয় যুগ (১০৪২–১২৬৮): উত্তর সাইনাই পথ বন্ধ হয়ে গেলে অধিকাংশ হাজি সমুদ্রপথে জেদ্দা যেতেন।
৩. তৃতীয় যুগ (১২৬৯–১৮৮৪): হাজিরা আবার উপকূলীয় স্থলপথে যাতায়াত শুরু করেন।
৪. চতুর্থ যুগ (১৮৮৪–বর্তমান): স্থলপথ পরিত্যক্ত হয়ে প্রথমে সিউইজ থেকে জাহাজে এবং পরে বিমানে হজে যাত্রা শুরু হয়।
আফ্রিকা ও মাগরেব অঞ্চলের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
মরক্কোর মারাকেশ, ফাস ও সালেহ শহরসহ পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগাল থেকেও হাজিরা যেতেন। তারা ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে অথবা সমুদ্রপথে মিশরে পৌঁছাতেন।
তারা আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও লিবিয়া হয়ে মাহদিয়া, স্ফাক্স, সাসে, ত্রিপলি, বারকা ও তবরুক পেরিয়ে মিশরে প্রবেশ করতেন। এরপর উপকূল ধরে আলেকজান্দ্রিয়া ও রশিদে পৌঁছাতেন।
রশিদ থেকে তারা নৌকায় করে কায়রো যেতেন এবং সেখান থেকে আধুনিক আল-বারাকায় মিশরীয় হজ কাফেলার সঙ্গে মিলিত হতেন। সেখান থেকে কাফেলা সিউইজ হয়ে স্থলপথে সাইনাই ও লোহিত সাগরের উপকূল ধরে অথবা সাগর পাড়ি দিয়ে জেদ্দা হয়ে মদিনা ও মক্কায় পৌঁছাত।
সূত্র : আরব নিউজ