কাবা সামনে রেখে নামাজ আদায়ের সময় অনেকেই জানেন না, কাবার গায়ে জড়ানো কালো গিলাফের ওপর সোনালি অক্ষরে খচিত  ক্যালিগ্রাফির মহান শিল্পী কে? তিনি হলেন আবদুর রহিম আমিন বুখারী।

পবিত্র ভূমিতে জন্ম

১৯১৭ সালে ইসলামি ঐতিহ্যের শহর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন আবদুর রহিম আমিন বুখারী। ছোটবেলা থেকেই শতবর্ষ পুরাতন মসজিদ ও শিল্পকর্মের মাঝে বেড়ে উঠেন। এভাবেই আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয়। শিশুকালের শখ পরিণত হয় জীবন সাধনায়।

কিসওয়া কারখানায়... 

১৯২৬ সালে কিসওয়া কারখানা

বুখারী দক্ষ শিক্ষকদের কাছ থেকে আরবি হস্তলিপির সূক্ষ্মতা ও সৌন্দর্য শিখেছেন। ১৯২৭ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাদশা আবদুল আজিজ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সদ্য গঠিত কিসওয়া কারখানায় যোগ দেন তিনি। এখান থেকেই তার শিল্প জীবনের সূচনা। 

১৯৩০-এর দশকে তিনি কারিগরি প্রধান হন এবং ১৯৬০-এর দশকে উপ-পরিচালকের দায়িত্বে আসেন। এই পথচলায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।

কাবার গিলাফে বুখারীর ক্যালিগ্রাফি

প্রতি বছর কাবার জন্য নতুন কিসওয়া তৈরি হয়—কালো রেশমি কাপড়ে সোনালি ও রূপালি বর্ণে খচিত থাকে কোরআনের আয়াত। দীর্ঘ দিন এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে বুখারীর ক্যালিগ্রাফিতে।

তিনি বিশেষভাবে দক্ষ ছিলেন সুলুস লিপিতে (বিশেষ ধরনের আরবি লিপি)। কিসওয়ার উপরের সোনালি ফিতা (হিজাম) এখনো তার হাতে আঁকা ডিজাইন অনুসরণ করেই তৈরি করা হয়। 

বুখারীর হাতে আঁকা আয়াতগুলো ট্রেসিং পেপারে লেখা হতো, পরে তারই নেতৃত্বে একটি দল তা কিসওয়ায় স্থানান্তর করতো।

কাবার দরজায় বুখারীর ক্যালিগ্রাফি

১৯৪৪ সালে, বাদশা আবদুল আজিজ কাবার পুরোনো দরজার স্থলে সোনার আবরণে নতুন দরজা নির্মাণের নির্দেশ দেন। দরজায় খচিত ক্যালিগ্রাফির দায়িত্ব দেওয়া হয় বুখারীকে।

তিনি সুলুস লিপিতে কালিমা শাহাদাত, আল্লাহর নাম ও কোরআনের নির্দিষ্ট আয়াত লিখে দেন। পরে তা তামা ও রূপার উপর খোদাই করা হয়। এটি ১৯৪৭ সালে স্থাপন করা হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে কাবার যে বর্তমান দরজা স্থাপন করা হয়, সেখানেও তার হাতের তৈরি ক্যালিগ্রাফি রয়েছে।

বিরল সম্মান

কাবার দরজা, গিলাফের ক্যালিগ্রাফি ছাড়াও ১৯৩০-এর দশকে তিনি প্রথম সৌদি পতাকার জন্য আয়াত লিখেছেন, বিভিন্ন মসজিদের পর্দা, মদিনায় মহানবী (সা.)-এর রওজা শরিফের পর্দায়ও তার হস্তলিপি রয়েছে। 

বাদশা ফয়সাল বুখারীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে সূচিকর্মের মাধ্যমে তার নাম কিসওয়াতুল কাবার (কাবার গিলাফ) গায়ে স্থায়ী করে দিয়েছেন। বুখারীরর প্রতি বাদশা ফয়সালের অনন্য সম্মানের নিদর্শন আজও বহাল আছে।

মক্কায় কাবার গিলাফের হিজামে (সুতায়) সোনালি সূচিকর্মের মধ্যে ‘আবদুর রহিম আমিন’ লেখা তারই নাম। এটি নিরবে তার গভীর শ্রদ্ধা স্মারক।

ইন্তেকাল

বুখারী ১৯৯০-এর দশকে ইন্তেকাল করেছেন। তবে তার ক্যালিগ্রাফি আজও কিসওয়ার অংশ হয়ে প্রতি বছর কাবাকে আচ্ছাদিত করে। তার নকশা এখনো ব্যবহৃত হয়, তার হাতে গড়া শিল্প এখনো নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের পথ দেখায়।

সূত্র : দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন