এক সময় উত্তর আফ্রিকার সুফি সাধক, দরবেশ, মুসাফির ও গরিব মুসলমানদের আশ্রয় কেন্দ্র ছিল জেরুজালেমের পুরনো নগরীতে অবস্থিত ঐতিহাসিক জাওইয়া মাসমুদিয়া। প্রায় ৭০০ বছর আগে মহান আলেম ও দানবীর শায়খ ওমর আল-মাসমুদী এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

জাওইয়া বলা হয়, সুফি, দরবেশ তরিকার মুসলিমদের জন্য আশ্রয়ের জন্য নির্মিত ভবন ও অবকাঠামোকে। বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মিত খানকার সঙ্গে তুলনাযোগ্য।

১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে (৭০৩ হিজরি) স্থাপিত এই জাওইয়া বা তরিকাখানা ছিল একাধারে মসজিদ, মাদরাসা ও অতিথিশালা। দুইতলা ভবনটির প্রতিটি তলায় ছিল ১০টি করে কক্ষ। এখানে উত্তর আফ্রিকার (তৎকালীন মাগরিব অঞ্চল লিবিয়া থেকে মরিতানিয়া পর্যন্ত) সুফি, দরবেশ ও মুসাফিররা অবস্থান করতেন।

মরক্কো পাড়ার প্রতীকী স্থাপনা

হারাতুল মাগারিবা বা মরক্কো পাড়ার পশ্চিম প্রান্তে আল-আকসা মসজিদের বাইরে মাত্র কয়েক কদম দূরে ছিল জাওইয়া মাসমুদিয়া। পাশেই ছিল ঐতিহাসিক খালিদিয়া গ্রন্থাগার।

১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর ইসরায়েল এই মরক্কো পাড়া গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও মরক্কোর কয়েকটি পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে টিকে আছে শুধু জাওইয়া মাসমুদিয়া।

শায়খ ওমর আল-মাসমুদী কে ছিলেন?

শায়খ ওমর বিন আবদুল্লাহ আল-মাসমুদী আল-মুজাররাদ ছিলেন মালিকি মাযহাবের একজন বিশিষ্ট আলেম ও সুফি। তাকে ‘দরবেশ, দানশীল ও ন্যায়ের পথপ্রদর্শক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইতিহাসবিদ মুজিরুদ্দিন আল-হাম্বলী।

তিনি নিজের সম্পদ ব্যয় করে জাওইয়াটি নির্মাণ করেন এবং সেটিকে মরক্কো থেকে আগত দরিদ্র সুফি ও দরবেশ ও মুসাফিরদের জন্য ওয়াকফ (ধর্মীয় ট্রাস্ট) ঘোষণা করেন। তিনটি বাড়ির আয় তিনি এই জাওইয়ার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দান করেন। ওয়াকফ পরিচালনার জন্য তিনি শর্ত দেন, তত্ত্বাবধায়ক অবশ্যই ধার্মিক ও  মরক্কোর কেউ হতে হবে।

শায়খ ওমর জেরুজালেমেই মৃত্যুবরণ করেন। হাওশ আল-বুস্তামিয়া এলাকায় ঐতিহাসিক মামানুল্লাহ কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে ।

শিক্ষা, আধ্যাত্মিকতা ও আশ্রয়ের কেন্দ্র

দীর্ঘকাল ধরে জাওইয়া মাসমুদিয়া ছিল মরক্কোর সুফি, আলেম ও মুসাফিরদের প্রথম আশ্রয়স্থল। কেউ স্থায়ীভাবে জেরুজালেমে বসবাস করলে কিংবা অল্প সময়ের জন্য আগমন করলে এই জাওইয়াই ছিল তাদের ভরসা।

কালের পরিক্রমায় ভবনটি ক্ষয়ে গেলেও অটোমান যুগে একাধিকবার পুনর্নির্মাণ করা হয়। এর স্থাপত্যে অটোমান শিল্পের স্বাক্ষর আজও দৃশ্যমান।

১৯৬৭ সালে যুদ্ধ ও দখলের পরও জাওইয়াটি তুলনামূলক অক্ষত ছিল। ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে সেখানে এখনো মরক্কোর কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে।

সূত্র : আল-জাজিরা 

এনটি