হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা সময়ের নামাজ পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারি, মুসলিম)

হাদিসের ঠান্ডাকালীন নামাজ বলে যা বুঝানো হয়েছে

ঠাণ্ডাকালীন নামাজ বলে ফজর ও আসরের নামাজ বোঝানো হয়েছে। এ সময়গুলো দিনের দুই প্রান্ত। দিনের মধ্যবর্তী সময় অপেক্ষা এ দুই সময়ে পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকে। সে দিক থেকে এই দুই সময়কে ঠাণ্ডাকাল বলা হয়েছে। এই হাদিসে এ দুই সময়ের নামাজ পড়লে জান্নাত লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।

এ দুই সময়ের নামাজ অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাজের ফজিলত এত বেশি হওয়ার কারণ এই যে, তুলনামূলকভাবে এই দুই সময়ে নামাজ পড়া বেশি কঠিন। 

ফজরের সময় আবহাওয়া শীতল থাকে। এ সময় খুব ভালো ঘুম হয়। গভীর ঘুম ছেড়ে নামাজের জন্য উঠা একটু কষ্টকর। নফস সহজে প্রস্তুত হতে চায় না। শয়তানও বাধা দেয়। তাই এ সময় নামাজ পড়তে হলে নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হতে হয়। সে জিহাদে যারা জিততে পারে তাদের পক্ষেই নামাজ পড়া সম্ভব হয়।

একইভাবে আসরের নামাজ পড়তেও নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়। কারণ এ সময় মানুষের বিভিন্ন ধরনের কাজের ব্যস্ততা থাকে। তখন দিনের সব কাজ গুছিয়ে ঘরে ফেরার তাড়া থাকে সবার। 

সব কাজ শেষ করতে না পারলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বলে নফস বোঝাতে থাকে। দুনিয়াবী ক্ষতিকে সাধারণত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। শয়তান নানা বাহানা ও যুক্তি দাঁড় করাতে থাকে। নফস ও শয়তানের সেসব যুক্তি ও বাহানা উপেক্ষা করে এমন ব্যক্তিই নামাজে দাঁড়াতে পারে, যার ঈমান মজবুত, নামাজের প্রতি যার ভালোবাসা আছে, আখিরাতে মুক্তি লাভের চিন্তা আছে যারা, সর্বোপরি আল্লাহর ভয় এবং তার ভক্তি ও ভালোবাসা আছে এমন ব্যক্তিরাই এই নামাজ আদায়ে সক্ষম।

এ দুই নামাজে যেহেতু দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ত্যাগ ও আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হয় এবং নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধেও তুলনামূলক বেশি সংগ্রাম করতে হয়, তাই এর সওয়াবও তুলনামূলক বেশি। আবার অধিকতর ত্যাগ ও কষ্টস্বীকার সত্ত্বেও যখন এই দুই নামাজ আদায় করা হয়, তখন অন্যসব নামাজও যে অবশ্যই আদায় করা হবে তা তো বলাই বাহুল্য। 

কাজেই এ দুই নামাজে অধিকতর উৎসাহ দান করে দিনের অন্যান্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতিও যত্নবান করে তোলার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ যে ব্যক্তি এ দুই নামাজ ঠিকমত আদায় করবে, সে স্বাভাবিকভাবেই বাকি তিন নামাজও আদায় করবে। 

আর যখন কোনও ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে আদায়ে যত্নবান থাকবে, তখন সে পুরো দীন ও শরীয়তের অনুসরণেই সচেষ্ট থাকবে। তার মাধ্যমে কোনোঅন্যায় ও অপরাধ সহজে হবে না। 

এনটি